ছবি: প্রতীকী
বাবুল হক, মালদহ: করোনা (Corona Virus) পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল জেনেই দেহ দাহ পর্ব সম্পন্ন করেছিলেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু বুধবার সকালে পুরসভার তরফে জানানো হল, মৃতের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে! এই ঘটনার জেরে প্রবল বিপাকে পড়েছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। কার্যত একঘরে করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। সেই সঙ্গে মালদহবাসীর মনে জাঁকিয়ে বসেছে সংক্রমণের আতঙ্ক।
জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম প্রবীরকুমার দত্ত (৫৭)। তিনি পূর্ব রেলের মালদহ ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন। সোমবার সকাল ১১ টা নাগাদ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় প্রবীরবাবুর। তার আগেই ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার জন্য লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু তার ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়েছিল তিনি করোনা আক্রান্ত নন। স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই হাজির হয়েছিলেন তাঁদের সৎকারে। এরপরই পাড়া-প্রতিবেশীরা জানতে পারেন, স্বাস্থ্য দপ্তরের করোনা পজিটিভের তালিকায় মৃতের নাম রয়েছে। আর এই ঘটনাকে ঘিরেই ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায় পুরনো মালদহ পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শর্বরীপাড়া এলাকায়। এই ঘটনার পর মৃত ওই রেলকর্মীর পরিবারকে কার্যত সামাজিক ‘বয়কট’ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী আতঙ্কিত বাসিন্দারাও ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন। সংক্রমণের আতঙ্কে রাস্তাঘাট একেবারে শুনশান হয়ে গিয়েছে।
মৃতের পরিবারের দাবি, মেডিক্যাল কলেজ থেকে মৃত্যুর কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল ‘শ্বাসযন্ত্রের নিচের অংশে সংক্রমণ এবং হাইপারটেনশন ডেথ’। মৃতের ছেলে অভিজিৎ দত্ত বলেন, “কয়েকদিন ধরে বাবা ঠান্ডাজনিত কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এরপর বাবাকে রেল হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। সেখান থেকেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন বাবার করোনা পরীক্ষার জন্য লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সোমবার সকাল ১১ টা নাগাদ বাবা চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান। এরপরই ওনার মৃত্যুর খবর আমাদেরকে জানানো হয়। সোমবার দুপুরে বাবার দেহ সৎকার করার জন্য সাদুল্লাপুর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জানতে পারি, স্বাস্থ্য দপ্তরের করোনা আক্রান্তদের তালিকায় বাবার নাম রয়েছে। কেন এভাবে আমাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলা হল, তা বুঝতে পারছি না। এই ঘটনার পর আমাদের পরিবারকে এক প্রকার সামাজিক বয়কটের মুখে পড়তে হয়েছে। আমরা তদন্ত চাই।”
এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন কাউন্সিলর বৈশিষ্ট্য ত্রিবেদী বলেন, “প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের উদাসীনতার কারণেই এই ঘটনাটি ঘটেছে। যে ভদ্রলোক মারা গিয়েছেন, তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে দেখে অনেকেই মৃতদেহ শবদাহ করতে গিয়েছিলেন। পরে বলা হয়েছে, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এনিয়ে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।” পুরনো মালদহ পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের নোডাল অফিসার সাধন দাস বলেন, “মৃত প্রবীরকুমার দত্তের করোনা পজিটিভ ছিলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও রিপোর্ট নেই। কেউ গুজব ছড়িয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.