অরূপ বসাক: কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। ইচ্ছে অনেকদিনই ছিল মালবাজার মহকুমার ক্রান্তির রহমতটারির বাসিন্দা শেখ হাসিনা বানুর। কিন্তু উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে মাথায় খেলে যায় দারুণ এক বুদ্ধি। আর সেই বুদ্ধির জোর ও আত্মত্যাগেই স্বপ্নপূরণ হল তাঁর। হাসিনার কাজে আর গর্বিত ও মুগ্ধ এলাকাবাসী।
এবার একটু বিস্তারিত বলা যাক। মাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী হাসিনা। ছোট থেকেই অন্যের সাহায্যে এগিয়ে যেতে ভালবাসতেন। রাস্তার অনাথ দুঃস্থ ছেলে মেয়েদের দেখলেই মনের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠত। তাই নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, দুস্থ গরিব শিশুদের মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বালাবেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষা দেবেন। পড়াশোনার খরচের দায়িত্বও নেবেন। কিন্তু অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল অর্থ। তাঁর পরিবারেরই তো আর্থিক সংকট। উপায় খুঁজতে গিয়েই মাথায় খেলে গেল বুদ্ধিটা। স্কুল ছাত্রীদের জন্য সরকারিভাবে চালু হয় কন্যাশ্রী প্রকল্প। আর তাকেই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলেন হাসিনা।
তিন বছর ধরে কন্যাশ্রী থেকে যে টাকা পেয়েছেন, সবটাই ব্যাংকে রেখে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, সেই টাকা দিয়েই গরিব এবং স্কুল ছুট ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা শেখাবেন। পাশাপাশি সম্ভব হলে সপ্তাহে এক দিন তাদের খাওয়ার ব্যবস্থাও করবেন। দীর্ঘদিনের প্রয়াস বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমানে ৪২ জন গরিব এবং স্কুল ছুট ছেলে মেয়েদের প্রতিদিন নিজের বাড়িতে পড়াশোনা শেখান হাসিনা। পাশাপাশি সেই অর্থেই ৪২ জন দরিদ্র ছেলে মেয়েদের জামাকাপড় এবং সপ্তাহে এক দিন খাবার ব্যবস্থা করেছেন। আর এসবের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “মমতা দিদি কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করায় আজ আমি সেই টাকা দিয়ে গরিব মানুষের সেবা করছি। কন্যাশ্রী চালু না হলে আজ আমার স্বপ্নপূরণ হত না।”
তবে এত অল্প বয়সে এমন আত্মত্যাগ বিরল। কেন নিজের ভবিষ্যতের অর্থ দিয়ে অন্যের সেবা করছেন হাসিনা? উত্তরে কলেজ ছাত্রী বলেন, “আমি পড়াশোনা শিখেছি। নিজের যা দরকার নিজেই অর্জন করে নেব। কিন্তু এই ছোট ছোট গরিব ছেলে মেয়েদের কী হবে? ওরা যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই চেষ্টাই করছি মাত্র।” হাসিনার এমন উদ্যোগে আপ্লুত ও গর্বিত পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা। একেই হয়তো প্রকৃত শিক্ষিত বলে। এভাবেই এলাকায় প্রকৃত শিক্ষার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন হাসিনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.