সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: প্রায় সাড়ে আট বছর পর গ্রামে ফিরল নেতাই গণহত্যার মূল অভিযুক্ত রথীন দণ্ডপাট। আদালতের নির্দেশে শুক্রবার তার পরিজনেরাও গ্রামের বাড়িতে ফেরে। এবার থেকে তারা থাকতে পারবে নেতাই গ্রামে। কড়া নিরপত্তায় নেতাই গ্রামে ফিরে তালা ভেঙে বাড়ি ঢোকে সকলেই৷
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি৷ লালগড় থানার নেতাই গ্রামে এই রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির ছাদ থেকেই সাধারণ বিক্ষোভরত মানুষজনের উদ্দেশে গুলি চালায় সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা৷ চার মহিলা-সহ মোট ন’জন মারা গিয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ২৮জন। এই ঘটনায় তোলপাড় হয়ে যায় রাজ্য রাজনীতি৷
সেই ঘটনার পর প্রায় আট বছর কেটে গিয়েছে৷ সেই কলঙ্কিত ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে রথীন এতদিন গ্রামছাড়া থাকার পর বাড়ি ফিরেছে শুক্রবারই৷ ফিরে তার বক্তব্য, “ গ্রামে ফিরতে কার না ভালো লাগে? বাড়ি ফিরে পেয়েছি। এখনই তো থাকা যাবে না। সাফ করে তবেই থাকা যাবে।” এদিন নেতাই গ্রামে সকাল থেকেই খবর ছিল আদালতের নির্দেশে নেতাই গণহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত রথীন দণ্ডপাট আদালতের নির্দেশে বাড়ি ফিরে পায়। সকাল থেকে নেতাই গ্রামে ঢোকার মুখে শহিদ বেদি চক এলাকায় ছোট ছোট জটলা দেখা গিয়েছিল। গ্রামের দোকানেও উৎসাহীদের ভিড়। তবে শহিদ পরিবারের কাউকেই এখানে দেখা যায়নি।
গ্রামে ঢুকলে পালটা আক্রমণের মুখে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় এদিন বেলা একটা পনেরো নাগাদ পুলিশের কনভয় করে গ্রামে পৌঁছয় রথীন দণ্ডপাট। ঘন নীল রঙের জিনস আর চেক হাফ হাতা জামা পরিহিত রথীন গ্রামে নিজের বাড়ির সামনে পৌঁছতে অনেকেই এগিয়ে আসেন৷ তার সঙ্গে কথা বলেন প্রায় সকলেই। রথীনও গ্রামে ফিরে চাষবাস নিয়ে খোঁজখবর নেয়৷ বেশ অনেকক্ষণ নিজের প্রায় ভাঙাচোরা দোতলা বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিভিন্ন পুলিশকর্তাদের উপস্থিতিতে দরজার তালা ভেঙে বাড়ি ঢোকে সে৷ বাড়ির আসবাব পত্র-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র বুঝিয়ে দেন পুলিশকর্মীরা।
আগের ঘটনা এখন আর মনে করতে চান না গ্রামবাসীরা। এদিন বিজলি সিং এবং পু্ষ্প সিং নামে দুই গ্রামবাসী বলেন,“রথীন আমাদের সঙ্গে কথা বলল৷ অনেক দিন পরে দেখা হল। ভালই লাগল।” তবে এদিন শহিদ পরিবারের সদস্যরা রথীনের গ্রামে ফেরা মেনে নিতে পারেননি। নিহতদের পরিবারের বক্তব্য,‘‘আমরা এদের গ্রামে ফেরা মেনে নিতে পারছি না। আমাদের ঘর খালি করে যাঁরা চলে গেল, তাঁরা তো আর ফিরবেন না। কী করে মানব? আবার যে নেতাইয়ের মতো ঘটনা হবে না তা কে বলতে পারে?” নেতাই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারিকানাথ পন্ডার অবশ্য বক্তব্য, “অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থেকেছে। মানবিকতার খাতিরে ওদের গ্রামে থাকতে দেওয়া উচিত।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.