সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বছর সাতেক আগে বিহারে পুলিশকর্মী হত্যাকাণ্ডেও কী যুক্ত কুন্দন কুমার? ২০১৬ সালে বিহারের বৈশালি থানা যে কুন্দনকে গ্রেপ্তার করেছিল সেই কী নদিয়ার রানাঘাটে গয়নার দোকান লুট ও গুলি চালনায় ধরা পড়েছে? খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পকেটমারি, ছিনতাইয়ে হাতেখড়ি। সেখান থেকে লুট, খুনে হাত পাকিয়ে পেশাদার দুষ্কৃতীর সিন্ডিকেট। মধ্যপ্রদেশ থেকে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের বৈশালির যুবক কুন্দন কুমারের সিন্ডিকেটের জাল বিস্তৃত। গত বুধবার নদিয়ার রানাঘাটে গয়নার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় ধরা পড়েছে শার্প শুটার কুন্দন। পূর্ব বর্ধমানে কয়লা মাফিয়া রাজেশ ওরফে রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে সিট। সে-ই গুলি করেছিল রাজুকে। ভিডিও ফুটেজেও তা দেখা গিয়েছে বলে দাবি এই খুনের তদন্তে গঠিত সিটের। সিট কুন্দনকে হেফাজতে নিতে চায়। সূত্রের খবর, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় পুলিশও কুন্দনকে হেফাজতে নিতে চায় সেখানকার মামলায়। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গ, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটরের বিভিন্ন থানা কুন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হেফাজতে নিতে চায়।
বিহারের বৈশালির বাসিন্দা কুন্দন। তার ভাই মুকেশও অপরাধ জগতে যুক্ত। রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারও হয়েছে। কম বয়সেই এমন কোনও অপরাধ নেই যার সঙ্গে এরা যুক্ত নয়। সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বিহারের বৈশালির সদর থানার মনুয়া চওড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছিল সেখাকার এএসআই অশোক কুমার যাদব। তিনি বৈশালি থানায় কাজে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাসস্টপে। সেই সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী চারচাকা গাড়িতে এসে ওই পুলিশ আধিকারিককে লিফ্ট দিতে চেয়ে গাড়িতে তোলে তারা। তারপর লুট করতে শুরু করে। তখন ওই পুলিশকর্তা গুলি চালালে এক দুষ্কৃতী জখম হয়। বাকিরা তখন অশোক কুমারকে গাড়িতেই গুলি করে খুন করে।
সেই ঘটনায় পুলিশ ওই বছরে জুনের শেষের দিকে সৌরভ কুমার ওরফে পলু, পবন কুমার ও কুন্দন কুমারকে গ্রেপ্তার করেছিল। সকলেরই বয়স কুড়ির কোঠায় ছিল সেই সময়। এই কুন্দনই রানাঘাটে ডাকাতি ও গুলি চালানোর ঘটনায় ফের ধরা পড়েছে বলে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা। বিহার পুলিশই কুন্দনের বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর। সেই সময় কুন্দনের যা বয়স ছিল এখন তার থেকে সাত বছর বেশি ধরলে রানাঘাটে ধরা পড়া কুন্দনের বয়স তার কাছাকাছিই হচ্ছে। তবে তখনকার ছবির সঙ্গে এখনকার ছবির বেশ পার্থক্যও রয়েছে। তা যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা। যদিও রাজু হত্যাকাণ্ডে গঠিত সিট গত আগস্টেই কুন্দন-সহ আরও কয়েকজন দুষ্কৃতীর বিষয়ে বিহার পুলিশের কাছে তথ্য চেয়েছিল তবে সেভাবে সহযোগিতা মেলেনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, ছোটখাট ছিনতাই, লুট থেকে শুরু করে এখন অপরাধ জগতের সাম্রাজ্য চালাচ্ছে কুন্দনবাহিনী। কুন্দন মূলত কনট্র্যাক্ট বা সুপারি নিত। তার অধীনে বিভিন্ন জনকে নিয়োগ করতো ব্যাংক ডাকাতি, গয়নার দোকান লুট, সোনা বন্ধক রেখে ঋণদান সংস্থার কার্যালয়ে লুটের জন্য। পাশাপাশি নিজেও বড় অপারেশনে লিড করত। শার্প শুটার কুন্দন সুপারি কিলারও হয়ে ওঠে। বড় বরাত পেলে পুরো টিম নিয়ে নিজেই অপারেশন চালাত। রাজু হত্যাকাণ্ডে সুপারি নিয়ে কাজ হাসিল করেছিল কুন্দন।
মধ্যপ্রদেশে দোকান লুটের ঘটনায় কুন্দন গ্যাংয়ের যোগ রয়েছে। সেখানকার পুলিশ নদিয়া পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গিয়েছে। ছত্তিশগড় এবং ঝাড়খণ্ডেও একাধিক লুট ও খুনের ঘটনায় এই কুন্দনের প্রত্যক্ষ যোগসূত্র রয়েছে। সেখানকার পুলিশও রানাঘাট যাচ্ছে বলে খবর। উত্তরবঙ্গেও বিভিন্ন থানা এলাকায় ডাকাতি, লুটের ঘটনায় কুন্দন বাহিনীর যোগ রয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। ২০২১ সালে আসানসোলে একটি খুনের সুপারি পেয়েছিল কুন্দন। এছাড়া দুটি লুটের ঘটনাতেও কুন্দন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.