দীপঙ্কর মণ্ডল: ঘরের কোনা মুছতে এক লাখ, খাটের তলা মুছতে আরও দু’লাখ লাগবে৷ কাজের মাসির এহেন দাবিতে আকাশ থেকে পড়েন কর্তা-গিন্নি৷
বিজ্ঞাপনী কল্পনা এবার বাস্তবে৷
অঢেল টাকার ‘গতি করতে’ কাজের মাসিদের কাছে অনুরোধ আসছে৷ দুই ২৪ পরগনা-সহ শহর সংলগ্ন জেলাগুলি থেকে কলকাতায় কাজ করতে আসেন বহু মহিলা৷ ভোরের ট্রেনে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে নামেন তাঁরা৷ দিনভর কাজের শেষে রাতে বাড়ি ফেরেন৷ বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন জানালেন, “ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ি বাড়ি কাজে অসম্মান জোটা দস্তুর৷ কিন্তু পাঁচশো এবং হাজারের নোট বাতিল হওয়ার পর থেকে আমাদের খাতির বেড়েছে৷” ক্যানিংয়ের এক মহিলা জানালেন, “কর্তা-গিন্নি হঠাৎ করে খাতির করছেন৷ জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রসাদ হিসাবে মিষ্টির প্যাকেট দিয়েছেন৷ এত আপ্যায়নের কারণ বুঝতে পারছিলাম না৷ পরে একটা প্যাকেট দিয়ে তাঁরা বললেন তোমার অ্যাকাউন্টে এই টাকাগুলো রাখবে? পরে সময় সুযোগমতো ফেরত দিও৷” ক্যানিংয়ের ওই মহিলাই শুধু নয়, এমন আবেদন যাচ্ছে বহু কাজের মাসির কাছে৷ অ্যাকাউন্টে টাকা রাখতে রাজি হলে প্রতি লাখে পাঁচ হাজার টাকার অফার দেওয়া হচ্ছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য আবেদন ব্যর্থ হচ্ছে৷ অস্থায়ী লাখপতি হওয়ার লোভ থেকে বিরত থাকছেন কাজের মাসিরা৷
শুধু কাজের মাসিরাই নন, হিসাব বহির্ভূত টাকা রাখতে বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তার সঙ্গে যোগাযোগের খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷ ব্যবসায়ীদের একটা অংশ কাঁচা বিলে কাজ করেন৷ উপার্জিত টাকার বড় অংশ অফিসে বা বাড়িতে থাকে৷ বিপুল পরিমাণ সেই টাকা একটি বা দু’টি অ্যাকাউন্টে রাখার ঝুঁকি নিচ্ছেন না কেউ৷ কারণ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে রিপোর্ট যাবে আয়কর দফতরে৷ আড়াই লক্ষের বেশি টাকা একটি অ্যাকাউন্টে একদিনে জমা দিতে গেলেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে৷ টাকা বাঁচাতে তাই বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যদের অ্যাকাউন্টে সরানোর পরিকল্পনা চলছে৷ তবে এই ভাবনা খুব একটা কাজে আসছে না৷ প্রলোভন এড়িয়ে যাচ্ছেন বেশিরভাগ গ্রাহক৷ স্পষ্টত তাঁরা জানিয়ে দিচ্ছেন, অন্য লোকের টাকা রাখতে গিয়ে বিপদ আসতে পারে৷ আয়কর দফতর ডেকে পাঠালে তখন টাকার আসল মালিক স্বীকার করবেন না৷ তাহলে শুধু শুধু বিপদ বাড়াব কেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.