বাবুল হক, মালদহ: হাসপাতালই পরীক্ষাকেন্দ্র। কোলে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জন্মানো দুধের সন্তান। আর হাতে কলম। এভাবেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের আনজারা খাতুন। কথায় বলে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। কঠিন বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে যেন সেকথাই প্রমাণ হল আরও একবার। ছাত্রীকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন প্রায় সকলেই।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার নানারাই গ্রামের বাসিন্দা আনজারা খাতুন। হরিশ্চন্দ্রপুর কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ওই ছাত্রী। চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। বছর তিনেক আগে ওই গ্রামেরই যুবক মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে মন দেওয়া নেওয়া হয় তার। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে বিয়েও করে নেয় তারা। প্রথমে অস্বীকার করলেও, পরে বিয়ে মেনে নেন আনজারার বাবা আমির হোসেন। কিন্তু বিয়ের পরেও পড়াশোনা বন্ধ করেনি আনজারা। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় সন্তানসম্ভবা হয় আনজারা। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়ে বরাবরই বদ্ধপরিকর সে। চিকিৎসক সম্ভাব্য সন্তান প্রসবের দিনক্ষণ জানান। তিনি বলেন, “আনজারা ১৬ মার্চ মা হতে পারে।”
তবে সোমবার ভোর থেকেই শরীর খারাপ হতে শুরু করে। পরীক্ষার দিন প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভরতি হয় সে। সকাল সাতটা নাগাদ মেলে সুসংবাদ। ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় আনজারা। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার কী হবে? বছরখানেকের পরিশ্রম কী বৃথা যাবে? মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে পরিবারের। তবে আনজারা জানিয়ে দেয়, পরীক্ষা সে দেবেই। সন্তান জন্মের কয়েকঘন্টার মধ্যেই দুধের সন্তানকে কোলে নিয়ে পরীক্ষা দিতে বসে আনজারা।
সদ্য মা হওয়া ছাত্রীটি বলে, “সোমবার সকালেই আমার কন্যাসন্তান হয়েছে। কিন্তু এদিনই আমাদের পরীক্ষা শুরু। পরীক্ষা তো দিতেই হবে। হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। আশা করি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল হবে। ভবিষ্যতে কিছু একটা করতেই হবে।” আনজারার বাবা আমির হোসেন বলেন, “মেয়ে বেশ কিছু বছর আগে গ্রামেরই এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে করে। মেয়ে বিয়ে করলেও পড়াশোনা ছাড়েনি। কন্যাসন্তানের জন্মের পরেও মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে এটাই বড় কথা।” হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ শুভেন্দু ভক্ত বলেন, “আমাদের হাসপাতালে একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভরতি ছিল। সোমবার সকালে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় সে। তারপরেও সে হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দিতে চেয়েছে। সেটাই প্রশংসাযোগ্য। আমরাও সবরকম ব্যবস্থাপনা করে দিয়েছি।”
কোলে শিশুকন্যা, ঠেলায় ক্রিকেট কিট নিয়ে বিশ্বকাপের মাঠে নেমে নজির গড়েছেন পাক মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিসমা মারুফ। তাঁকে নিয়ে চর্চায় গোটা বিশ্ব। সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে নজির গড়লেন আনজারাও। নতুন মাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন প্রায় সকলেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.