সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: অনুন্নয়ন, দারিদ্র্য, মাওবাদী আতঙ্ক – এসব ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। জঙ্গলমহলের (Junglemahal) পড়ুয়াদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে এসবের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেমন কষ্টকর ছিল, তেমনই ছিল স্বপ্নও। সেই স্বপ্নই বোধহয় এতদিনে সার্থক হল। এবছর মাধ্যমিকে (Madhyamik Exam 2023) মেধাতালিকায় চমকে দেওয়ার মতো ফলাফল করল জঙ্গলমহলের ছাত্রছাত্রীরা। মেধাতালিকায় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের একঝাঁক উজ্জ্বল পড়ুয়া। প্রথম দশে নাম রয়েছে বাঁকুড়ার ১৩, পশ্চিম মেদিনীপুরের ৯ ও পুরুলিয়ার ৬ জনের। এহেন সাফল্যে বিস্মিত জেলার শিক্ষামহল।
পঞ্চম থেকে দশম – এই কয়েকটি স্থানেই রয়েছে বাঁকুড়ার (Bankura) ১৩ জন। পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম ও দশম – প্রতিটি র্যাঙ্কেই রয়েছে অন্তত ২ জন করে ছাত্রছাত্রী। সপ্তম হয়েছে ৩ জন। পঞ্চম হয়েছে ঈশান পাল। বাঁকুড়া বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতন হাই স্কুলের এই ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৮।
যুগ্ম পঞ্চম বাঁকুড়া মিশন গার্লস স্কুলের অন্বেষা চক্রবর্তী। ৬৮৭ ষষ্ঠ হয়েছে বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতন হাই স্কুলের ২ জন – শীর্ষেন্দু মণ্ডল, অপূর্ব সামন্ত। এক নম্বর কম অর্থাৎ ৬৮৬ নম্বর পেয়ে সপ্তমে ৩ জন। শুভদীপ সরকার, প্রাপ্তি ঘোষাল, স্নেহা কর।
যুগ্মভাবে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে অর্চিষ্মান চক্রবর্তী ও সোনাই মুখোপাধ্যায়। এদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৫। ৬৮৪ পেয়ে নবম স্থানে ২ জন – কৃতীসুন্দর দে, শ্রেয়া চক্রবর্তী। দেবজিৎ রায় ও অঙ্কনা দুবে ৬৮৩ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকার দশমে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। প্রত্যেক কৃতীর লক্ষ্য, আগামীতে আরও ভাল ফলাফল করে নিজেদের স্বপ্নপূরণ এগিয়ে যাওয়া।
এবার চোখ রাখা যাক জঙ্গলমহলের আরেক জেলা পুরুলিয়ার (Purulia) ফলাফলের দিকে। এক, দু’জন নয়। অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় পুরুলিয়ার যে ছ’জন জায়গা করে নিয়েছে, তার মধ্যে ওই ছ’জন-ই পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের। প্রান্তিক পুরুলিয়ার এই শিক্ষায়তন এখন জ্বলজ্বল করছে রাজ্যের মেধা তালিকায়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে
এই প্রতিষ্ঠানের দু’জন ছাত্র একসঙ্গে মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধাতালিকায় ছিল। তারপর এত বড় সাফল্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখেনি। দেখেনি বনমহলের এই জেলাও। পুরুলিয়ার স্কুলের ছাত্র হলেও এদের বাড়ি কলকাতা, শহরতলি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পশ্চিম বর্ধমানে। ৬৮৮ নম্বর পেয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে অরিজিৎ মণ্ডল ও শুভজিৎ দে।
ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে সৌম্যদীপ দাস ও সৌম্যদীপ নায়ক, তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৭। সপ্তম হয়েছে শুভ্রম হাজরা পেয়েছে ৬৮৬। অষ্টম স্থানাধিকারী অর্পণ সেন বর্মনের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৫।
আসলে এই বিদ্যাপীঠের আবহটাই একেবারে অন্যরকম। ক্যাম্পাসে পা রাখলেই যেন নিয়ম, নিষ্ঠা, বিধি, শৃঙ্খলা পালন যেন নিজের মনের মধ্যে জাগ্রত হয়। বিবেককে জাগ্রত করে। জাগ্রত করে চেতনাকে। তাই তো বিদ্যাপীঠের প্রবেশপথে প্রধান তোরণে লেখা আছে, “উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান নিবোধত।” স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণীকে সামনে রেখেই যে এগিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। সব সময়ই প্রায় প্রত্যেকটা মুহূর্তেই স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণীকে মননে সঁপে নিজেদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায় পড়ুয়ারা। সান্ধ্যকালীন প্রার্থনায় সাউন্ড সিস্টেমে বেজে ওঠে, “ওঠো, জাগো, সদগুরুর সান্নিধ্যে গিয়ে জ্ঞানপ্রাপ্ত হও।”
তাই এই সাফল্যে এই বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক স্বামী জ্ঞানরূপানন্দ মহারাজ বলেন, “পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠে বরাবর ভালো ফল হয়। গড় নম্বর থাকে ৯৩ বা ৯৩.৫ শতাংশ। তবে এবার প্রতিষ্ঠানের ৬ জন ছাত্র রাজ্যের মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ, সারদা দেবী, স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের এই প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যাচ্ছে। সেই আদর্শকে সামনে রেখেই আমাদের এই সাফল্য। বিদ্যাপীঠের সকল সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী, ছাত্র, অভিভাবক সকলের প্রচেষ্টাতে এই ফল।”
এবছর মাধ্যমিকে পাশের হারে গতবারের তুলনায় একধাপ নেমে গেল পশ্চিম মেদিনীপুর (West Midnapore)। সারা রাজ্যে এবার চতুর্থ স্থান দখল করল এই জেলা। পাশের হার ৯৩.০৯ শতাংশ। অথচ গতবার তৃতীয় স্থানে ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর। পাশের হার ছিল ৯৪.৬৯ শতাংশ। পাশের হারে প্রথম স্থান দখলে রেখেছে পূর্ব মেদিনীপুর। ওই জেলায় এবার পাশের হার ৯৬.৮১ শতাংশ। এবছর দাঁতন উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের সমুদ্র দত্ত ৬৮৪ পেয়ে নবম স্থান অধিকার করেছে।
দেখুন পুরুলিয়ার কৃতীদের ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.