ধীমান রায়, কাটোয়া: বারোয়ারি পুজো কমিটির দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব৷ যার জেরে একই দেবীমন্দিরে চলছিল দুটি আলাদা প্রতিমা তৈরির কাজ। কিন্তু বিপত্তি ঘটল সোমবার৷ রাতের অন্ধকারে উধাও হয়ে গেল একটি অসমাপ্ত মাতৃ মূর্তি। মঙ্গলবার সকালে যা নজরে আসতেই মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হলেন কাটোয়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ওই পুজো কমিটির কর্মকর্তা শ্যামল ঠাকুর। এবং পরে মূর্তি খোঁজার দাবিতে পাড়ার বারোয়ারি দুর্গামন্দিরে ধরনায়ও বসলেন। তাঁর দাবি, প্রশাসন ও পুলিশকে উদ্যোগ নিয়ে দুর্গাপ্রতিমা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। পুজোর মুখে কাটোয়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় সার্কাস ময়দান নাগরিক কল্যাণ সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
[ আরও পড়ুন: পারিবারিক অশান্তির জেরে স্ত্রীকে খুন, গ্রেপ্তার স্বামী ]
জানা গিয়েছে, বিগত ২৫ বছর ধরে চলে আসছে এই সর্বজনীন দুর্গাপুজো। ২০০৮-এ আড়াই কাঠা জমি কিনে পাকা মন্দির তৈরি করে পুজো কমিটি। জমির দলিলে সম্পাদক হিসাবে নাম রয়েছে কাটোয়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ওই পুজো কমিটির কর্মকর্তা শ্যামল ঠাকুরের। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিগত কয়েকমাস ধরে ক্লাব কমিটির একাংশের সঙ্গে মতবিরোধ চলছে শ্যামলবাবুর। এর জেরে চলতি বছর নাগরিক কল্যাণ সর্বজনীন পুজো কমিটির মন্দিরে তৈরি হচ্ছিল দুটি প্রতিমা। একটি শ্যামলবাবু ও তাঁর অনুগামীরা উদ্যোগ নিয়ে তৈরি করছিলেন। অন্য প্রতিমাটি তৈরি হচ্ছিল অপর গোষ্ঠীর তত্ত্বাবধানে। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে শ্যামলবাবুরা দেখেন, তাঁদের অসমাপ্ত দুর্গা মূর্তিটি আর মন্দিরে নেই। সেখানে একটি প্রতিমা রয়েছে এবং মন্দিরের গেটে তালা লাগানো। এরপরই এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়৷ ঘটনার কথা উল্লেখ করে কাটোয়ার মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ জানান শ্যামল ঠাকুর। এবং বৃহস্পতিবার সকাল ক্লাবের দুর্গামন্দিরের সামনে ধর্না শুরু করেছেন শ্যামলবাবু তার কয়েকজন অনুগামী।
[ আরও পড়ুন: বর্ধমানের রেলসেতু নিয়ে ‘নাটক’ তুঙ্গে, রেলমন্ত্রীর বদলে প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন আগামিকাল ]
ক্লাবের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন শ্যামল ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘তরুণ সাধু ও পরিতোষ পাল দুর্গাপ্রতিমা চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। প্রতিমা ফেরতে দাবি জানিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সদুত্তর না পাওয়ায়, আমরা ধরনায় বসতে বাধ্য হয়েছি। মূর্তি ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত ধর্না চলবে।” যদিও শ্যামল ঠাকুরের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ক্লাবের সদস্য তথা অভিযুক্ত পরিতোষ পাল। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের সামনে শ্যামল ঠাকুর কথা দিয়েছিলেন, উনি প্রতিমা সরিয়ে নেবেন। ওনার শিল্পীই প্রতিমা নিয়ে চলে গিয়েছেন। এখন আমাদের ওপর মিথ্যা দোষারোপ করছেন।” প্রশাসন সূত্রে খবর, সার্কাস ময়দান নাগরিক কল্যাণ সর্বজনীন পুজো কমিটির পক্ষ থেকে পুজোর অনুমতির জন্য দুটি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। যে ঘটনাকে ঘিরে প্রশাসনিক মহলেও ধন্দ তৈরি হয়েছে৷ মহকুমা শাসক সৌমেন পাল বলেন, ‘‘আমরা কাগজপত্র খতিয়ে দেখব। যাকে সঠিক মনে হবে তাকে পুজো করার অনুমতি দেওয়া হবে।”
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.