ছবি: প্রতীকী।
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ফের ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি। এবারের ঘটনাস্থল বীরভূমের নলহাটি থানার রনহা গ্রাম। এক মহিলাকে মারধর করে বাড়িতে আটকে রাখার অভিযোগ উঠল কয়েকজন এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে। ওই মহিলাকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। উত্তেজিত জনতাকে হঠাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়, লাঠিচার্জ করে। ঘটনা ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত রইল রনহা গ্রাম।
সোমবার বোরখা পরিহিতা এক মাঝবয়সী মহিলাকে রনহা গ্রামে ঢুকতে দেখা যায়। তাঁর হাতে একটি ঝোলা ছিল। গ্রামের স্কুলের সামনে গিয়ে এক শিশুর হাত ধরতেই ছেলেধরা বলে সন্দেহ করেন গ্রামবাসীরা। তাঁকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে লোক জমতে থাকেন। শুরু হয় মারধর। গ্রামেরই কয়েকজন মানুষ ওই মহিলাকে একটি বাড়ির মধ্যে আটকে রাখে। খবর পেয়ে লোহাপুর ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে নলহাটি থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করেও ইট,পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তখনকার মতো পুলিশ ওই মহিলাকে নিয়ে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। স্কুলের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে ফের মারধরের চেষ্টা করে মারমুখী জনতা। এলাকায় তখন হাজারখানেক মানুষের ভিড়।
এরপর নলহাটি থানার বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে প্রথমে উত্তেজিত গ্রামবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি কেউ। উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় পুলিশ শূন্যে গুলি ছোঁড়ে, কাঁদানে গ্যাস ফাটায়। তাতেই ছত্রভঙ্গ হতে থাকেন উত্তেজিত জনতা। এরপরেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে এলাকা ফাঁকা করে মহিলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। জানা গিয়েছে, মিনা বিবি নামে ওই মহিলার বাড়ি পার্শ্ববর্তী সালসান্ডায়। তিনি মেয়ের জন্য আটা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। তাকে ছেলেধরার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর করা হয়েছে।
স্কুলের সামনে গিয়ে যে শিশুটির হাত ধরেছিলেন মিনা বিবি, সেই শিশুর বাবা সহিদুল মণ্ডল বলেন, “আমি শুনলাম সকালে ওই মহিলা ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ছেলেকে। গ্রামবাসীরা তাকে ধরেছে। আমি ওই মহিলার শাস্তি চাই।” অভিযোগকারী পরিবারের দাবি, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে রাজিবুল শেখ নামে এক ছাত্র জানায়, অভিযুক্ত মহিলা প্রথমে রাজিবুলের পিসতুতো ভাই আখতারুলকে ধরতে যায়। সে পালিয়ে যাওয়ার পর, তাকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে ধরতে যায়। সে পালাতে গিয়ে পড়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে গোটা বিষয়টি সে জানায়। এদিকে ঘটনাস্থলে আসেন নলহাটি ২-এর বিডিও রাজদীপ শংকর গৌতম। তিনি বলেন, “মানুষ প্রচণ্ড উত্তেজিত ছিল। পুলিশ অনেকক্ষণ ধরে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ করতে হয়। তবে এই মহিলা ছেলেধরা কিনা, তা তদন্ত না করে বলা যাবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.