ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: বাড়ি ভারতে। কিন্তু জামাকাপড় শুকোনো হয় বাংলাদেশের মাটিতে। এতদিন পর্যন্ত যে মাটিকে নিজের দেশের বলে জানতেন, এখন সেটাই অন্য দেশের। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে পথ ধরে বাজারহাটে যেতেন, এখন সেটাই পর। কিন্তু বিকল্প পথ নেই। বাংলাদেশের মাটির সঙ্গেই নিত্যদিনের কাজ জড়িয়ে বনগাঁর, ভারতের শেষ গ্রাম বয়রার মানুষের। কিন্তু ভারতের নাগরিক তাঁরা। তাই দেশের সরকার গড়ার জন্য ভোট দিতে এলেন তাঁরা। কিন্তু আসতে হল, সেই বাংলাদেশের মাটি দিয়ে হেঁটে। দুই দেশের জিরো পয়েন্টে এভাবেই জীবনযাপন তাঁদের।
[তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত সংবাদ প্রতিদিন, মাটিতে ফেলে বেধড়ক মার সাংবাদিকদের]
ভারত বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্তের কথা তো সবারই জানা। কিন্তু এই পেট্রাপোল সীমান্তের আশপাশেই এমন অনেক সীমান্ত রয়েছে, যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। নেই নো ম্যানস ল্যান্ড। একটি সিমেন্টের পিলারের দু’পাশে, ভারত-বাংলাদেশ লিখে বিভক্ত করা হয়েছে সীমানা। এমনই একটি গ্রাম বয়রা। প্রচারে কোনও প্রার্থী আসেন না সেখানে। ভোটের কোনও উত্তাপও চোখে পড়ে না। কোথাও কোনও দেওয়াল লিখনও নেই। কিন্তু সোমবার পঞ্চম দফায় লোকসভা নির্বাচনে গোটা বনগাঁ কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গেই ভোটে অংশগ্রহণ করলেন তাঁরা। কিন্তু এই গ্রামের এমনই ভৌগোলিক অবস্থান যে, ভোটকেন্দ্রে তাঁদের আসতে হয় বাংলাদেশের মাটির উপর দিয়ে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। তাঁদের একটাই আশা, এবার যারা সরকারে আসবে, তাঁদের কথা হয়তো ভাববে।
বয়রা গ্রামের অবস্থানটি এমন যে, সেটিকে তিনদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশের সীমানা। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা বলাই বিশ্বাস। এতদিন তাঁর বাড়ি ভারতে হলেও, রান্নাঘরটি ছিল বাংলাদেশের জমিতে। তবে বছরখানেক আগে বিজিবি এসে তাঁদের সেখান থেকে সরে যেতে বলে। যে কোনও একটি দেশ বেছে নিতে বলা হয় তাঁদের। তাই বাংলাদেশের মাটি থেকে রান্নাঘর সরিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। সীমান্তের নতুন পিলার বসানো হয়েছে। বাঁশ আর পতাকা দিয়ে সীমারেখাও টেনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই গ্রামের এমনই অবস্থান যে, বলাইবাবুর পরিবারের লোকেরা ঘর থেকে বেরিয়ে দু’পা বাড়ালেই পড়ছেন বাংলাদেশের মাটিতে। শুধু এই পরিবারই নয়, এই গ্রামের বহু পরিবারের অবস্থা এমনই। সেক্ষেত্রে যদিও বিজিবির চোখরাঙানি নেই। তবে এখন অন্য ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের। সম্প্রতি ওই এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া বসানোরর জন্য মাপজোক হয়েছে। জিরো পয়েন্ট থেকে বেশ কয়েক মিটার ছেড়ে বসবে সীমান্তের বেড়া। যার দরুন এই গ্রামের বহু বাড়ি পড়বে নো ম্যানস ল্যান্ডে। এই পরিবারগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়েই এখন আশঙ্কার প্রহর গুনছেন এই বয়রা গ্রামের মানুষ। তাঁদের আশা, ২০১৯-এ যে সরকার আসবে, জিরো পয়েন্টের উপর বসবাসকারী এই পরিবারগুলির পুনর্বাসনের বিষয়ে ভাববে তারা। তাই সেই আশায় বুক বেঁধে অন্য দেশের জমি দিয়ে হেঁটে এদিন নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়েছেন তাঁরা।
[নাট্যকার চন্দন সেনের আবাসনে হামলা, সিপিএম কর্মীকে মারধর]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.