ফাইল ছবি
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: নামের সঙ্গে জুড়ে ছিলেন রাম৷ আর সেই রাম নামের মাহাত্ম্যই বোধহয় এবারের আসানসোলের ভোট বৈতরণী পেরিয়ে গেল বিজেপি৷ আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কয়েকটি গ্রাম, যার সঙ্গে রাম কিংবা সীতার নামে যুক্ত, সেখানকার প্রভূত সমর্থন পেয়েছেন বিজয়ী বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়৷ আর ঠিক উলটোটাই হয়েছে রাম-সীতা বিবর্জিত অন্যান্য গ্রামের ক্ষেত্রে৷ নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণের পর এমন চমকপ্রদ তথ্যই উঠে আসছে৷
আসানসোলের রামনগর, শ্রীরামপুর, রামচন্দ্রপুর,সীতারামপুর, উত্তর-রামপুর, রামডির বাসিন্দারা ঢালাও ভোট দিয়েছেন রামের নামে৷ এইসব এলাকায় বা বুথে বিজেপির পক্ষে ভোট পড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ করে। বিশেষ সমীক্ষার পর দেখা গেছে, আগে বা পরে ‘রাম’জুড়ে রয়েছে যেসব গ্রামে, সেখানেই ভাল ভোট প্রাপ্তি হয়েছে বিজেপির৷ তবে এই ফর্মুলা ততটা খাটেনি কালীতলা, শিবপুর বা দুর্গানগর মতো গ্রামের ক্ষেত্রে। রামনগর কোলিয়ারি এলাকায় ৭৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে গেরুয়া শিবির। কুলটির কল্যাণেশ্বরীর পাশেই এই রামনগর এলাকা। কোলিয়ারি অধ্যুষিত এই এলাকায় তিনটি বুথে ৪৯৫১ ভোটে এগিয়ে গেরুয়া শিবির। বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়র প্রাপ্ত ভোট ৬৮৩০৷ সেখানে তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন পেয়েছেন ১৮৭৯ ভোট।
কুলটির পাশেই রয়েছে সালানপুর ব্লক। সেখানকার ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম রামচন্দ্রপুর, শ্রীরামপুর, রামডি ও উত্তর-রামপুর। আল্লাডি পঞ্চায়েতের রামচন্দ্রপুরের দুটি বুথ থেকে গেরুয়া শিবির এগিয়ে ২৯০ ভোটে। দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর এলাকার ভোটার হাজারের কাছাকাছি। এখানের দুটি বুথে বাবুল সুপ্রিয়র প্রাপ্ত ভোট ৯৩৭ ও তৃণমূল প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট ৩১৫ টি। তার আরেকটু দূরে রামডি গ্রামে বিজেপি ভোট পায় ২২১ টি ও তৃণমূলের ভোট রয়েছে ৬১টি। এই সব এলাকায় গেরুয়া শিবিরের জয়ের ব্যবধান কমবেশি ৪০ শতাংশ করে। কুলটি এক নম্বরের মণ্ডল সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘এত ব্যাপক পরিমাণে ভোটে জয় এলো প্রথমবার। এর আগে পুরভোটে এই সাফল্য আসেনি। এই এইসব এলাকাগুলি কিন্তু একেবারেই হিন্দিভাষী মানুষের এলাকা নয়। পুরোপুরি বাঙালি গ্রামও রয়েছে। কিন্তু তাঁরাও ঢালাও ভোট দিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়কে।’
অন্যদিকে, ইসমাইলের ‘রাম’কৃষ্ণ বিদ্যালয়ের চারটি বুথে ঘাসফুল শিবিরের থেকে গেরুয়া শিবিরে এগিয়ে যায় ১৫৩৯ ভোটে। বার্নপুরের রামবাঁধ এলাকার ৬ বুথে বিজেপি প্রার্থী তৃণমূল প্রার্থী থেকে এগিয়ে যায় ২২৫২ ভোটে। রানিগঞ্জ রতিবাটি রামডাঙা অঞ্চলের বুথ থেকে বাবুল সুপ্রিয় এগিয়ে ২৩০ ভোটে। কুলটির সীতারামপুর একটি বড় শহর। সীতারামপুর রেলস্টেশন এলাকায় দুটি ওয়ার্ডে মোট ১৯ টি বুথ রয়েছে। যার মধ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুথ রয়েছে ৩ টি। ওল্ড সীতারামপুরের এই তিনটি বুথ বাদ দিয়ে মোট ১৯ টি বুথে ৩৩০০ বেশি বুথে এগিয়ে যায় শ্রীরাম চন্দ্রের বাহিনী। কুলটি মণ্ডল তিনের সভাপতি অমিত গড়াই বলেন, সার্বিকভাবে বাবুল সুপ্রিয় প্রতি বুথে এগিয়ে রয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুথ বাদ দিয়ে। শুধু রাজনৈতিক মিছিলেই নয়, দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জুড়ে গিয়েছে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি৷ বিজেপির মতে, শুধু হিন্দি বলয় নয়, আম-বাঙালির কাছে ‘রাম’ যেখানে, সেখানেই গেরুয়া শিবিরের জয় নিশ্চিত হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.