অরূপ বসাক, মালবাজার: প্রেমের সম্পর্ক মানেনি কিশোরীর পরিবার। পরিবার ছাড়বে, নাকি প্রমিক। এই দুইযের দ্বন্দ্বে পড়ে শেষপর্যন্ত গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হল যুগল। মৃতদের নাম মিনা কর্মকার ও বিপ্লব রায়। রবিবার সকালে চা-বাগানের মধ্যেই একটা গাছে ওড়নার ফাঁসে তাদের ঝুলতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে মাল থানার পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। জোড়া দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালবাজার মহকুমার নেপুছাপুর চা-বাগানে।
জানা গিয়েছে, নাবালিকা মিনা কর্মকার বড়দিঘি হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ওই স্কুলেই একই ক্লাসে পড়ছে বিপ্লব রায়। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। কিছুদিন আগে দুই বাড়ির লোকজনই তা জেনে যায়। বিপ্লবের পরিবার মিনাকে পুত্রবধূ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আপত্তি করেনি। তবে মিনার মা এই সম্পর্কে নারাজ ছিলেন। মাল ব্লকের বড়দিঘি স্টেশনপাড়াতে মিনাদের বাড়ি। পাশের কান্তদিঘি কুমারপাড়াতে থাকে বিপ্লবরা। শনিবার রাতে কোনওভাবে মিনা জানতে পারে, পরীক্ষার আগেই তাকে বিহারে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এরপরই বাড়ি থেকে পালিয়ে বিপ্লবের কাছে চলে আসে। বিপ্লবের মা বিমলাদেবী, মিনার কাছ থেকে সবকিছু শোনার পর তাকে আশ্বস্ত করেন। জানান, রবিবার সকালেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেবেন। তবে মায়ের এই আশ্বাসে যুগলের মধ্যে কোনও ভাবান্তর দেখা যায়নি। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকেও তারা পালিয়ে যায়। এদিকে ততক্ষণে মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর জেনেছেন অভিভাবকরা। মিনার বাড়ির তরফে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। একই অবস্থা বিপ্লবের বাড়িতেও। তাঁরাও কিশোর-কিশোরীকে খুঁজতে শুরু করেন। তবে রাতভর তাদের কোনও সন্ধান মেলেনি। সকালে দেহ উদ্ধারের পর এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির জন্য মিনার পরিবারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিমলা রায়। তাঁর দাবি, মিনার মা বিয়েতে বেঁকে না বসলে এই ঘটনা এড়ানো যেত।
এই ঘটনায় মিনার দাদা রোহিত কর্মকার জানান, বিপ্লবের সঙ্গে বোনের বিয়ে হত। তবে বোনের ১৮ বছর হয়নি তাই দেরি হচ্ছিল। বলা বাহুল্য, এর আগেও একবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার ভয়ে দু’জনে পালিয়েছিল। পরে তাদের বুঝিয়েসুঝিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। মিনা ও বিপ্লব রাজ্যস্তরের কবাডি খেলোয়াড়। বিপ্লব ওড়িশাতে গিয়েও রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছে। এমন দুই উজ্জ্বল ছেলেমেয়ের মৃত্যুর ঘটনা শিক্ষকরা মেনে নিতে পারছেন না। স্কুলেও নেমেছে শোকের ছায়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.