সন্দীপ চক্রবর্তী: বাঙালি এমন নববর্ষ দেখেনি। এমনভাবে নতুন বছরকে বরণ করতে হবে সেটা ভাবতেও পারেনি কেউ। কিন্তু এক করোনা থাবা বসিয়ে বদলে দিয়েছে পয়লা বৈশাখের আকাঙ্খা। লকডাউনে একলা থাকাটাই অভ্যেস। এই নববর্ষকে উপলক্ষ্য করেই রাজনীতির নেতাদের বাড়িয়ে নিতে হয় জনসংযোগ। এবার সেই সংযোগ দূরে দূরে। কিন্তু তবু সেই দূরত্ব মোটেও দুঃখে পাশে থাকাতে দূরত্ব না। বরং আরও বেশি কাছাকাছি। রাজ্যের ডাকসাইটে মন্ত্রীরা কেউ মন খারাপের সময়ে সেভাবে শুভেচ্ছা জানাতেই চাইছেন না, রয়েছে কুণ্ঠা। কেউ বা আবার এলাকার মানুষকে মাংস ভাত খাওয়াতে চাইছেন। আর কেউ করাতে চাইছেন মিষ্টি মুখ। কেউ শিশুকে দুধ খাওয়াতে পারলে খুশি। সকলের মনেই অবশ্য প্রার্থনা, করোনা যুদ্ধে যেন নতুন বছরে জয়লাভ করে মানবতা।
রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রীরা এক একরকম ভাবে কাটাচ্ছেন বাংলা নতুন বছরের প্রথমদিন। দীর্ঘ বছরের রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মন খারাপ। বয়স বেড়েছে। শারীরিক অবস্থার কারণেই যেন অনেকের লকডাউনে বেশি করে বাইরে বেরনো বারণ। সুব্রতবাবু অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন। তাহলে মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন কীভাবে? বললেন, “বাড়ি বসেই যা করা সম্ভব সেইটুকুই করব। লকডাউনে বাড়িতেই থাকব। কেউ ফোন করলে শুভেচ্ছা জানাব। আর তো কোনও উপায় নেই!” হাতের কাছে ফোন নিয়েই অপেক্ষা করবেন তিনি। অরূপ বিশ্বাস লকডাউনে অন্য দিনের মতোই নিজের কেন্দ্রের বিজয়গড়ের অফিসে বসেছেন। তাঁর কথায়, “এবারের নববর্ষে তো আর ভাল থাকার উপায় নেই। মানুষ যাতে ভাল থাকেন সেই চেষ্টাই করে যাব। প্রার্থনা এইটাই।” রাত দশটার বেশি পর্যন্ত কাটাবেন ওই অফিসেই। মাঝে অবশ্য ঘণ্টা দেড় বা দুয়েকের বিরতি। বাড়িতে স্নান খাওয়া বা টুকিটাকি কাজ। কেউ এলে ফিরে যাচ্ছেন না। কোনও না কোনও উপায়ে সমাধান করে দিচ্ছেন অরূপ। প্রয়োজনে নিজে হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার।
নিজের কেন্দ্র ডোমজুড়ে পড়ে থাকছেন আর এক উদ্যমী মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন বছরের শুরুর দিন অন্তত হাজার দশেক লোকের মুখে মাংস ভাত তুলে দিতে চাইছেন তিনি। সেই মতো প্রস্তুতি চলছে। প্রতিদিনই খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। তিনি বললেন, “বছরের প্রথম দিন সবাই একটু মাংস ভাত খাবেন, এটাই ইচ্ছা। সবাই হাত লাগাচ্ছেন। মানুষের পাশে থাকতে চাই এভাবে।” ফেসবুকের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাবেন তিনি। সেখানেও থাকবে করোনা যুদ্ধে জয়ে রাজ্য সরকারের বিধি নিষেধের বার্তাও।
খাস উত্তর কলকাতার বাসিন্দা মন্ত্রী শশী পাঁজা নববর্ষের শুরুতে ছোট ছোট শিশুদের সঙ্গে কাটান অনেকটা সময়। কলকাতার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাচ্চাদের মুখে দুধ তুলে দেন তিনি। এমনিতে অবশ্য কেন্দ্রের বাসিন্দাদের কাছে রেশন পৌঁছে দেওয়ার নিত্য কাজ থাকছেই।
নাদন ঘাট এলাকায় নিজের কেন্দ্রের মধ্যে একটি অনাথ ও বৃদ্ধাশ্রম চালান স্বপন দেবনাথ। বহু আগে থেকেই। সেখানেই সাত-আট দিন ধরে পড়ে রয়েছেন তিনি। আশপাশের গ্রামের মানুষ মাঝে মাঝে আসছেন সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই। নববর্ষে বেলা এগারোটা থেকে খাবার তুলে দেওয়া হবে বা পৌঁছে দেওয়া হবে খাবার। মন্ত্রী চাইছেন, বাংলা নতুন বছরের শুরুর দিন অন্তত ভাত, ডিম, সোয়াবিনের তরকারির পাশাপাশি একটু মিষ্টি তুলে দিতে। আর তুলে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা বার্তা। একইভাবে শুভেচ্ছা বার্তা-সহ মাস্ক ও স্যানিটাইজার তুলে দেবেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মতো আরও কিছু মন্ত্রী। চন্দ্রিমা নতুন বছরের প্রথম দিন কাটাবেন পুরনো কেন্দ্র নব ব্যারাকপুরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.