শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: কথায় আছে ‘ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া’৷ মঙ্গলবার ঘাটালের বিদ্যাসাগর স্কুল ময়দানে ভারতী ঘোষের সমর্থনে করা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভায় জন সমাগম দেখে কটাক্ষের সুরে একথাই বলছেন বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা৷ দলের সর্বভারতীয় সভাপতির জনসভা বলে কথা, তাই প্রচারে কোনও ত্রুটি রাখেনি জেলা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷ কিন্তু তাতেও মাঠ ভরাতে ব্যর্থই হলেন তাঁরা৷ কার্যত ফাঁকা মাঠেই ভারী ভারী শব্দে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানালেন অমিত শাহ৷ অভিযোগ করলেন, ‘জয় শ্রীরাম’ বললেই এখন অসন্তুষ্ট হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
[ আরও পড়ুন: ‘আমি তৃণমূলের সৈনিক মাত্র,দিদির উপর আস্থা রাখুন’, প্রচারে বার্তা মিমির ]
যে মাঠে মোটামুটি পঞ্চাশ হাজার মানুষ একসঙ্গে স্থান পেতে পারেন, সেই মাঠে খুব বেশি হলে এক থেকে দেড় হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে জনসভা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি৷ সাফাই দিলেন, সভায় আগত বহু সমর্থককে বলপূর্বক আটকেছে তৃণমূল৷ হুঁশিয়ারির সুরে বললেন, এখানে বিজেপিকে থামানো যাবে না৷
দলের শীর্ষ নেতা যাই বলুন না কেন, অন্য সুর শোনা গিয়েছে জেলার বিজেপি কর্মীদের গলায়৷ তাঁদের বক্তব্য, সকাল ১০টায় অমিত শাহের জনসভা হওয়ার কথা থাকলেও, তিনি সভাস্থলে উপস্থিত হন দুপুর ১টায়৷ ফলে তিন ঘণ্টা গ্রীষ্মের চড়া রোদে বসে থাকতে হয় তাঁদের৷ অনেকে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যান৷ তাঁদের আরও অভিযোগ, এদিনের সভাস্থলে ছিল না কোনও ছাউনি৷ ছিল না সামান্য পানীয় জলের ব্যবস্থাও৷ কড়া রোদে অসুস্থও হয়ে পড়েন অনেকে৷ যদিও সভায় লোক না হওয়ার অন্য সাফাই দিয়েছেন বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য৷ তিনি জানান, এখন ধান কাটার সময়৷ তাই কাজের চাপে বহু কর্মী-সমর্থক আসতে পারেননি৷
[ আরও পড়ুন: দত্তপুকুরে সবজির গুদামে বিধ্বংসী আগুন, বন্ধ যান চলাচল ]
জনাকয়েক সমর্থকের সামনেই এদিনের জনসভা থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শানান অমিত শাহ৷ অভিযোগ করেন, ‘জয় শ্রীরাম’ বললে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তুষ্ট হচ্ছেন৷ উনি ভারতের সংস্কৃতি ভুলে গিয়েছেন৷ কিন্তু বিজেপি সমর্থকদের ভারতের সংস্কৃতি থেকে দূরে রাখা যাবে না৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে রুখতে পারবেন না৷ হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “২৩ তারিখ বাংলায় ২৩টা আসন পাবে বিজেপি৷ এরপর বাংলা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাত করা হবে৷ বাংলায় পরিবর্তন আসবেই৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আর থাকবে না৷” তিনি আরও বলেন, ‘‘সমগ্র দেশে এখন একটাই স্লোগান ঘুরছে – মোদি…মোদি…মোদি৷ এই স্লোগান আসলে নরেন্দ্র মোদিকে দেওয়া দেশবাসীর আশীর্বাদ৷ এই স্লোগানই বলছে ২৩ তারিখের পর নরেন্দ্র মোদি আবার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন৷’’
[ আরও পড়ুন: বাম সমর্থকের বাড়িতে বোমাবাজি, দত্তপুকুরে জখম শিশু]
এখানেই শেষ নয়, এদিন দাড়িভিট প্রসঙ্গ টেনেও মমতা সরকারকে আক্রমণ করেন অমিত শাহ৷ অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘ছাত্ররা বাংলা পড়তে চেয়েছিল৷ কিন্তু মমতার সরকার ওদের উর্দু পড়তে বাধ্য করেছিল৷ তাঁরা রাজি না হওয়ায়, ওদের গুলি করেছে মমতার প্রশাসন৷’’ অন্যান্য জনসভার মতোই এদিনও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও এনআরসি-র পক্ষে সওয়াল করেন শাহ৷ তুলে ধরেন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের একগুচ্ছ প্রকল্পের সফলতার উদাহরণ৷ অভিযোগ করেন, বাংলার উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে ৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দিয়েছে মোদি সরকার৷ কিন্তু সেই টাকা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি৷ শাসকদলের সিন্ডিকেট রাজ সেই টাকা নয়ছয় করেছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.