ফাইল ছবি
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কুড়মিরা ভোট কাটার রাজনীতি করছে বলে আক্রমণ করলেন বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর তাঁর এহেন মন্তব্যেই সমগ্র জঙ্গলমহলে কুড়মি জনজাতির মধ্যে ঝড় উঠেছে। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের শিবডি ময়দানে ওবিসি মোর্চার সম্মেলনে পুরুলিয়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর সমর্থনে জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে কুড়মিরা প্রার্থী দিয়ে তৃণমূলকে সুবিধা করতে চাইছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে ভোট কেটে এবার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সুবিধা করে দিতে চাইছে। ভোট কাটার রাজনীতি করছে।”
এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে পালটা দিয়েছেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা )তথা পুরুলিয়া কেন্দ্রের কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো। তিনি বলেন, “সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ শুভেন্দু অধিকারীর এই কথার জবাব জঙ্গলমহলের কুড়মি জনজাতির মানুষরা দেবেন। জাতিসত্তার লড়াইয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছি বলে ‘ভোট কাটুয়া’ হয়ে গেলাম। পুরুলিয়া কেন্দ্রে আমাদের ৩৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। এছাড়া হিতমিতান তথা সহযোগী সংগঠন রয়েছে। এই কেন্দ্রে আমরা জেতার মতো জায়গায় রয়েছি। একারণেই বিজেপি ভয় পাচ্ছে। আসলে বিজেপি প্রথম, দ্বিতীয় স্থানে লড়াই নেই। বিজেপি তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। সেই জন্যই আতঙ্কিত হয়ে এমন কথা বলছে। প্রাথমিক শিক্ষকের সমস্ত চাকরি শুভেন্দু পূর্ব মেদিনীপুর নিয়ে গিয়েছিল। বঞ্চিত পুরুলিয়া ভোটে তার জবাব দেবে।”
জঙ্গলমহলের ৪ আসনে কুড়মিরা প্রার্থী দেওয়ার পর থেকেই গেরুয়া শিবির চিন্তায়। কারন ২০১৯-র লোকসভায় কুড়মি ভোট বিজেপির পক্ষে গিয়েছিল। কুড়মি জনজাতির থেকে প্রার্থী দেওয়ায় এবার সেই ভোট পদ্মে যাবে না। তাতেই চিন্তার ভাঁজ বিজেপির। এদিন শুভেন্দু বলেন, “কুড়মিদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন তাদের এস টি তালিকাভুক্ত করতে হবে। এই আন্দোলনে কোনদিনই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ভারতীয় জনতা পার্টি । বরং এই আন্দোলনকে জটিল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর আপনারা ভোট কাটার রাজনীতি করছেন।”
ওই সভা থেকে শুভেন্দু বলেন, “মাননীয় অজিতপ্রসাদ মহোদয় এখানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেয় কে এসসি, এসটি ও ওবিসি তালিকাভুক্ত হবে। ৮ জানুয়ারি ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের কাছে সিআরআই রিপোর্ট চাই। ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১০ বার জাস্টিফিকেশন চায় । কিন্তু রাজ্য সেই রিপোর্ট পাঠায়নি।” তিনি বলেন, “কেন্দ্র সরকারের কোন দোষ নেই বরং মমতা জটিল করেছে। আর এখন আপনারা ভোট কাটার রাজনীতি করছেন।”
পুরুলিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “কুড়মি জনজাতিকে আদিবাসী করার জন্য রাজ্যের তরফে সমস্ত কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিজেপি আসলে বিভেদের রাজনীতি করছে। কুড়মি-আদিবাসী মানুষজনদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু এই জঙ্গলমহলে বিজেপি কোন ভেদাভেদ তৈরি করতে পারবে না। আমরা অতীতে যেমন ভাই-ভাই ছিলাম। তেমনই থাকব। আমাদের দলের নীতি হল সব ধর্ম, জাতির মানুষের সামগ্রিক উন্নয়ন। আমরা বিজেপির মত বিভেদের রাজনীতি করি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.