Advertisement
Advertisement

Breaking News

Lok Sabha Election Result 2024

ম্যাজিকের গ্যারান্টি নেই, ভেলকি দেখাতে গিয়েই ধরাশায়ী বঙ্গ-বিজেপি

রাজনীতির দাবা খেলায় কোন ভুল চালে ছিটকে গেল বঙ্গ বিজেপি?

Lok Sabha Election Result 2024: BJP's poll debacle in Bengal, here is why
Published by: Paramita Paul
  • Posted:June 4, 2024 4:03 pm
  • Updated:June 4, 2024 4:47 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘বাংলা ম্যাজিক দেখাবে।’ সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সত্যিই ম্যাজিক দেখাল বাংলা। তবে নেতিবাচক ম্যাজিক। এক্সিট পোলকে ডাহা ভুল প্রমাণ করে রাজ্যে সবুজ ঝড় তুলল তৃণমূল। আর বিজেপির ঝুলিতে মাত্র ১০ আসন। রাজনীতির দাবা খেলায় কোন ভুল চালে ছিটকে গেল বঙ্গ বিজেপি?

মোদি-শাহ-নাড্ডারা বাংলার ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছেন। প্রচারে ঝড় তুলেছেন। রোড শো করেছেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তাতে লাভ বিশেষ হল না। গো হারা হারল বঙ্গ বিজেপি। রাজনৈতিক মহল বলছে, একটা নয়, একাধিক কারণ রয়েছে বিজেপির বিপর্যয়ের।

Advertisement

[আরও পড়ুন: নিজের বাড়িতেই ক্ষতবিক্ষত মিমি! ছবি শেয়ার করে কাকে দুষলেন?]

মমতার জনমুখী প্রকল্প: তিনি মা-মাটি-মানুষের প্রতিনিধি। তাই আমজনতার কথা ভেবে একের পর এক জনমুখী প্রকল্প এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী থেকে শুরু করে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড, সমুদ্রসাথী- একের পর এক জনকল্যাণকর প্রকল্প এনেছেন তিনি। চব্বিশের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মাসিক ভাতা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার টাকা। জনজাতিদের জন্য ১২০০ টাকা। আর তাতেই বাজিমাত। একুশে পর চব্বিশেও বিজেপির মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল।

Advertisement

বাংলাকে বঞ্চনা: ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো একের পর এক প্রকল্পে টাকা আটকানোর অভিযোগ উঠেছে মোদির সরকারের বিরুদ্ধে। বিজেপির অভিযোগ ছিল, বাংলা টাকার হিসেব দেয় না। তাই কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। কিন্তু সেই ইস্যুকেই বিজেপির বিরুদ্ধে কাজে লাগায় তৃণমূল। দাবি করে, একুশে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত হয়ে বাংলাকে ভাতে মারার চেষ্টা করছেন মোদি-শাহরা। হাতিয়ার হয় শুভেন্দু-সুকান্তদের মন্তব্যও। বাংলার মানুষ প্রতি বিজেপির এই বঞ্চনা মেনে নিতে পারেনি বঙ্গবাসী। ভোটবাক্সে তা স্পষ্টতই দৃশ্যমান।

দুর্নীতি অস্ত্র ভোঁতা: ‘চাকরি চুরি’, ‘রেশন চুরি’-র মতো স্লোগান তুলেও ভোট বৈতরণী পার করতে ব্যর্থ বিজেপি। এমনকী, দুর্নীতিকাণ্ডে উদ্ধার হওয়া টাকাও ভোটারদের ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতি নিয়ে বার বার তৃণমূলকে বিঁধেছিলেন। তাতেও চিঁড়ে ভিজল না। কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল তাদের সেই প্রচার।

বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব: একুশের ভোটে বঙ্গ বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল গেরুয়া শিবিরের অন্তর্দ্বন্দ্ব। দিলীপ ঘোষ-সুকান্ত মজুমদার-শুভেন্দু অধিকারীদের আলাদা আলাদা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। তৃণমূল থেকে আসা বহু নেতা-নেত্রীকে গুরুত্ব দেওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছিল। রাজ্যস্তর থেকে একেবারে ব্লকস্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল এই দ্বন্দ্ব। নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন পুরনো কর্মীরা। আর চব্বিশের দিল্লির লড়াইয়েও এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খেসারত দিল বিজেপি।

বেলাগাম আক্রমণ: একুশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত আক্রমণের খেসারত দিয়েছিল মোদি-শাহরা। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব সেই ‘ভুল’ থেকে দূরে ছিলেন। কিন্তু দিলীপ ঘোষ. অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অসীম সরকাররা লাগাতার বেলাগাম মন্তব্য করেছেন। কুৎসিত ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়েছেন। কখনও মমতার মৃত্যু ঘণ্টা বাজিয়েছেন, কখনও তাঁর পরিবার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যা মোটেও ভালো চোখে দেখেনি রুচিশীল বাঙালি। ভোটবাক্সে যার জবাব দিয়েছেন তাঁরা।

[আরও পড়ুন: দেবের ভোটের রেজাল্ট নিয়ে কি টেনশনে রুক্মিণী? ৪ জুনের পরিকল্পনা জানালেন অভিনেত্রী]

মেরুকরণ প্রত্যাখ্যান: এই বাংলার কবিই লিখেছিলেন ‘আমরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান’। সেই বাংলায় দাঁড়িয়ে বার বার মোদি-শাহরা ‘ইসলাম ফোবিয়া’ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। মেরুকরণ করার চেষ্টা চালিয়েছেন। বলার চেষ্টা করেছেন, তৃণমূল বা কংগ্রেস জিতলে হিন্দুরা কোনঠাসা হবে। কিন্তু সে কথা কানে তোলেনি বঙ্গবাসী। তাই হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বঙ্গভঙ্গ: উত্তরবঙ্গ আলাদা হবে। ভিনরাজ্য হবে দার্জিলিং। এই স্লোগান দিয়ে ভোট বৈতরণী পারের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই স্লোগানই ব্যুমেরাং হয়েছে। বাংলার মানুষ ভাবতেই পারে না বাংলা আবার ভাঙবে। বিজেপি ক্ষমতাশালী হলে বঙ্গভঙ্গ হতে পারে, এই আতঙ্কেই গেরুয়া শিবির থেকে মুখ ফিরিয়েছে তারা।

সন্দেশখালি বুমেরাং: গ্রামবাসীর জমি, ভেড়ি দখল থেকে শুরু করে রাতের অন্ধকারে মহিলাদের তুলে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছিল। সেই ঘটনা শুধু বাংলা নয়, দেশজুড়ে চর্চায় এসেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ বিষয়ে বেশি শব্দ খরচ করেননি। তবে দৃঢ় ভাবেই দাবি করা হয়েছিল, যে, যা অভিযোগ উঠছে তার সবটা ঠিক নয়। অথচ প্রতি প্রচারে এটাকে নিয়ে সরব হয়েছিলেন মোদি, শাহরা। ধীরে ধীরে এটা স্পষ্ট হচ্ছিল সন্দেশখালির বেলুন যত ফোলানো হচ্ছে, তাতে ততটা হাওয়া নেই। আর তাই এই ইস্যু কার্যত ব্যুমেরাং হয়েছে।

বাঙালি বিদ্বেষ: মাছে-ভাতে বাঙালি। সময়-সময় পাঠার মাংস, মুরগির মাংস এমনকী অন্য মাংসও চলে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘অহিন্দুরা শ্রাবণ মাসে মাছ খায় না।’ সেই মন্তব্যকে বিজেপির বিরুদ্ধে হাতিয়ার করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিয়ম করে প্রতি জনসভায় সেই মন্তব্য শোনাতেন তিনি। আর রাজ্যের বাসিন্দারা এই বাঙালি বিদ্বেষ মোটেও ভালোভাবে নেননি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ