ফাইল ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘আমাকে এই কেন্দ্র থেকে জেতানোর দায়িত্ব আপনাদের। বাকি ৪১টা কেন্দ্র থেকে দলকে জেতানোর দায়িত্ব আমার।’ ভোট ঘোষণা হওয়ার পরই জানিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ঘরের ছেলে’র কথা রাখলেন ডায়মন্ড হারবারবাসী। রেকর্ড ব্যবধানে জিতলেন তৃণমূলের সেনাপতি। ইতিমধ্যে তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১০ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৭। ব্যবধান প্রায় ৭ লক্ষের বেশি।
ভোটের বাংলায় রাজ্য চষে ফেলেছেন অভিষেক। দলের গুরু দায়িত্ব সামলেছেন। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত সেরেছেন প্রচার। সেই অর্থে নিজের কেন্দ্রের প্রচার সেরেছেন শেষদফা ভোটের আগে। তার পরেও বিশাল ব্যবধানের এগিয়ে তিনি। রাজনৈতিক মহল বলছে, জয়ের রাস্তায় আগেই কাঁটামুক্ত করে রেখেছিলেন তিনি।
ডায়মন্ড হারবারের কারও পরিবারের কেউ অসুস্থ হোক কিংবা আর্থিক সমস্যা, পরিবারের কেউ নিখোঁজ হয়ে যান কিংবা অন্য় যে কোনও সমস্যা, সবক্ষেত্রেই এক ডাকে হাজির হয়ে যেতেন ‘দাদা’র সৈনিকরা। অভিষেক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দলের সেনাপতি হয়ে যতই রাজ্য চষে ফেলুন না কেন, তিনি ডায়মন্ড হারবারের ঘরের ছেলে। আর তাই ‘ঘরের ছেলে’কে দুহাত ভরিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে সংসদীয় এলাকার বাসিন্দারও।
ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র (Diamond Harbour Lok Sabha) সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে অত্যন্ত গরিমা বহন করছে। বিশেষ করে সংসদে বাগ্মী হিসাবে খ্যাতি পাওয়া জ্যোতির্ময় বসু থেকে বাম-আন্দোলনের সিদ্ধপুরুষ কংসারী হালদারের মতো ব্যক্তিত্ব এই কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের সাংসদ ছিলেন। অবশ্য অভিষেকও গত ১০ বছরে একাধিকবার সংসদীয় বিতর্কে অংশ নিয়ে ঝড় তুলেছেন, শব্দবানে কোণঠাসা করেছেন মোদি সরকারকে। রাজনৈতিক সমীকরণে ২০১৪ সালে অভিষেক যখন প্রথমবার প্রার্থী হন, তখন প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন সিপিএমপ্রার্থী ডা. আবুল হাসনাত। তিনি ৩৪.৬৬ শতাংশ ভোট পান। কিন্তু গত ২০১৯-এ ফুয়াদ হালিম কাস্তে-হাতুড়ির প্রতীক নিয়ে মাত্র ৬.৬৭ শতাংশ ভোট পান। বামপন্থীদের ভোট পদ্মফুলে যাওয়ায় গেরুয়াপ্রার্থী ৩৩.৩৯ শতাংশ ভোট পান। অবশ্য শুধু বামপন্থী ভোটার নয়। ফলতার বিধান পাড়ুইয়ের মতো ডায়মন্ড হারবারের বহু দাপুটে সিপিএম নেতাও বিজেপিতে যোগ দেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ২০১৪ সালে প্রদত্ত ভোটের ৪০.৩১ শতাংশ পাওয়া অভিষেক মানুষের পাশে থাকার ফসল হিসাবে ২০১৯ সালে নিজের সমর্থন বাড়িয়ে ৫৬.১৫ শতাংশে নিয়ে যান। এবার তরুণ মুখ প্রতীক উর রহমানকে প্রার্থী করে রামে যাওয়া ভোট বামে ফিরিয়ে আনার মরিয়া চেষ্টা করে আলিমুদ্দিন। বিজেপিও তাদের ‘মাঠের কর্মী’ অভিজিৎ দাসকে। কিন্তু তাতেও বিশেষ কোনও লাভ হল না। রেকর্ড ব্যবধানে নিজের জয় নিশ্চিত করলেন অভিষেক। কোন ম্যাজিকে টানা তিনবার ‘হীরক বন্দর’ জয় করলেন অভিষেক?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, বিজেপির সংগঠন এই সাতটি বিধানসভার কোথাও তেমন মজবুত নয়। মাত্র কয়েকটি পকেটে বিজেপির অস্তিত্ব রয়েছে। বামেদের অবস্থাও তথৈবচ। শুধু বিরোধীদের ছন্নছাড়া দশা নয়, এই জয়ের কৃতিত্ব সাংসদ অভিষেকেরও। নেপথ্যে রয়েছে করোনার সময় ‘ডায়মন্ড হারবার’ মডেল, ‘এক ডাকে অভিষেক’ হেল্পলাইন, নির্দিষ্ট সময় অন্তর এলাকার রিপোর্ট কার্ড পেশ। উপরন্তু শক্তপোক্ত সংগঠন, লাগাতার জনসংযোগ ব্যবধান বাড়িয়ে রেকর্ড গড়তে সাহায্য করেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি সেনাপতি হয়ে শুধু দলকে জেতালেন তাই নয়, রেকর্ড গড়ে ডায়মন্ড হারবারও জিতে নিলেন অভিষেক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.