সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: সেই কবেই রাজ্যের ৪২ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। ডায়মন্ড হারবারে এবারও তৃণমূল প্রার্থী গত দুবারের সাংসদ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আসনে একমাত্র এসইউসিআই ছাড়া এখনও পর্যন্ত বিরোধীরা কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বেশ কিছু নাম শোনা যাচ্ছে। বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের সঙ্গে আইএসএফের জোট নিয়ে এখনও কোনও স্থির সিদ্ধান্ত হয়নি। সেই জোট আদৌ হবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান দুপক্ষই। এদিকে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি কি আদৌ ডায়মন্ডহারবার আসনে জোটের বা আইএসএফের প্রার্থী হচ্ছেন? এই প্রশ্নে সিপিএম ও আইএসএফ দু’পক্ষই একে অপরের দিকে আঙ্গুল তুলছে। এহেন পরিস্থিতিতে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে বিরোধি শিবির কার্যত দিশেহারা।
এই যখন পরিস্থিতি তখন পথে-ঘাটে, চায়ের দোকানের ঠোকাঠুকিতে বিরোধী বিজেপি, সিপিএম ও আইএসএফকে ঘিরে চলছে নানা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এখনও কোনও প্রার্থী দিতে না পারায় রাজ্য নেতৃত্বের সমালোচনায় পিছিয়ে নেই ওই তিন দলের স্থানীয় নেতৃত্বও। কটাক্ষের সুর স্পষ্ট বিরোধী শিবিরের স্থানীয় ও জেলা নেতৃত্বের গলায়।
অভিষেকের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি নাম। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল, সোনালী গুহ, কৌস্তভ বাগচী, শঙ্কুদেব পাণ্ডা ও রুদ্রনীল ঘোষের নাম। বিজেপির এক জেলা নেতার কথায় এই চারজনের মধ্যে কারওরই তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থীকে বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নেমে তাঁকে পরাজিত করার ক্ষমতা নেই। ওই পাঁচজনের মধ্যে বিজেপি কাউকে প্রার্থী করলে তৃণমূলকেই একপ্রকার ওয়াকওভার দেওয়া হবে বলে মনে করছেন বিজেপির ওই জেলা নেতা। প্রবীণ এক বিজেপি নেতার কথায়, সংগঠন যেখানে নড়বড়ে সেখানে এমন অবস্থা হওয়াই স্বাভাবিক।
এদিকে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আর দেরি না করে অবিলম্বে এই কেন্দ্রে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব এবার অন্তত দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করুক। সে দিক থেকে বামফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে সিপিএমের তরুণ নেতা প্রতিকুর রহমানের নাম ভেবে রেখেছে বামফ্রন্ট তবে সিপিএম আলাদাভাবে কবে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করবে সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হয়নি। জোট না হওয়ায় আইএসএফের স্থানীয় নেতৃত্বও বিরক্তি প্রকাশ করেছে। নওশাদ সিদ্দিকি নিজে একাধিকবার অভিষেকের বিরুদ্ধে ভোটে লড়ে জেতার কথা জানিয়েছেন। অথচ প্রার্থী মনোনয়নে দলের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত সেকথা বলে তিনি আসলে ডায়মন্ড হারবারে লড়ার দায় এড়াচ্ছেন কিনা তা নিয়ে আইএসএফের অন্দরেই প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। তবে আইএসএফ সূত্রে খবর আজ সন্ধ্যের মধ্যেই আইএসএফ তাদের বাকি আসন গুলিতে প্রার্থী ঘোষণা করে দিতে পারে।
এমতাবস্থায় কার্যত ফাঁকা মাঠে গোল দিতে ডায়মন্ড হারবার লোকসভার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই জোরকদমে চলছে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি প্রচার। একদিকে যখন পুরসভার কাউন্সিলর, বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে শুরু করে তৃণমূল, যুব ও মহিলা তৃণমূল এবং ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় সমস্ত নেতৃত্বই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ডায়মন্ডহারবার লোকসভার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটের প্রচারে তখন অন্যদিকে প্রার্থী ঘোষণা করতে না পারায় বিরোধি শিবিরগুলিতে শুধুই হতাশা। বিজেপির ডায়মন্ডহারবারের এক নেতার আফসোস ভোট ময়দানে এখনই তৃণমূল কংগ্রেস বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছে। সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্ব নওশাদ সিদ্দিকিকে নানাভাবে কটাক্ষ করতেও ছাড়ছে না। এদিকে এখনও প্রার্থী ঘোষণা না করতে পারায় কান পাতলেই ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দাদের আলোচনায় শোনা যাচ্ছে বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে নানা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.