শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: বিজেপির (BJP) প্রথম প্রার্থীতালিকায় নেই রায়গঞ্জ কেন্দ্রের নাম। তাতেই জল্পনা উসকে উঠেছে, বিদায়ী সাংসদের নাম বাদ যাচ্ছে। ফলে রায়গঞ্জ আসনে নতুন করে বিজেপির প্রার্থীপদে একই নামে দুই ভূমিপুত্রের নাম ঘিরে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে নামে মিল থাকলেও নিশ্চিতভাবেই দুই ব্যক্তিত্ব একেবারেই ভিন্ন পরিবেশের। একজন ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রাজ্ঞ সন্ন্যাসী। অপরজন এক পুরকাউন্সিলর। প্রথমজনের জন্মভুমি রায়গঞ্জে। অন্যজন কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা। উত্তর দিনাজপুরের (Uttar Dinajpur) দুজনের মধ্যে শেষপর্যন্ত কি কোনও ব্যক্তি পদ্মপ্রার্থী হয়ে ভোটে লড়বেন? তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বস্তুত, ভোটের প্রস্তুতি শুরু হতেই রায়গঞ্জের প্রার্থীপদে ভূমিপুত্র কিংবা কন্যার দাবিতে সরব বিক্ষুব্ধ বিজেপি। এর পরই লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) বিজেপির প্রথম দফার ঘোষিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় রায়গঞ্জ কেন্দ্রে দেবশ্রী চৌধুরীর নাম বাদ যায়। বালুরঘাটের বাসিন্দা দেবশ্রী নিজের কেন্দ্র ছেড়ে কলকাতা ফিরে যান। আপাতত তিনি রয়েছেন দিল্লিতে। আর তার পর থেকেই এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থীপদে বিভিন্ন নাম জল্পনা-কল্পনায় ভাসছে উত্তর দিনাজপুরের দলের অন্দর। এমনকী সাধারণ ভোটাদের মধ্যেও গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী হিসাবে এই দুই নামের চর্চা চলেছে।
তবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে প্রথমজন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান কার্তিক মহারাজের নাম ঘিরে জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরের ঘরে বাইরে। কে ইনি? নাগর নদীর ধারে রায়গঞ্জের বাহিন পঞ্চায়েতের ঝিটকিয়া এলাকা সংলগ্ন পোকাম্বা (এখন শীতগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত)গ্রামে জন্ম কার্তিক ঘোষের। মাত্র বারো বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান তিনি। বাবা-মা পরিবার ছেড়ে পরবর্তীতে ভারত সেবাশ্রম সংঘে যোগদান করে স্বামী প্রণবানন্দের মন্ত্র আদর্শে দীক্ষিত হন। এর পরই কার্তিক মহারাজ নামে আশ্রমের পরিচিত মুখ তিনি। ধাপে ধাপে সন্ন্যাসী (Monk) হন। আশ্রমের যাপিত জীবনে সক্রিয় ভূমিকায় উঠে আসেন তিনি।
আশির দশক থেকে দেশের নানা প্রান্তের ভারত সেবাশ্রম সংঘের বার্ষিক যজ্ঞা অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ডাক পড়ে কার্তিক মহারাজের। সৌম্য মুখাবয়বের শানিত মেধাবী দৃঢ়চেতা মহারাজের বক্তৃতায় অচিরে দক্ষ বাগ্মী হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সহ- সন্ন্যাসীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর মুগ্ধতা। নব্বই দশকে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সংলগ্ন তিওড় ভারত সেবাশ্রম সংঘের দায়িত্বেও ছিলেন। কয়েক দিন আগেও কালিয়াগঞ্জের কুনোর ভারত সেবাশ্রম সংঘের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন। রাজ্যের বিভিন্ন শাখার সংঘের স্মারক বক্তৃতায় অংশ নিতে দেখা যায় তাঁকে। চলতি বছর সংঘের সহকর্মীদের নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেবদেবীর মূর্তি উপহার হিসাবে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। বস্তুত বুধবার রাত থেকে ভূমিপুত্র হিসাবে কার্তিক মহারাজের নামের পাশাপাশি প্রার্থীপদে অবিকল এক নামে আরেকজনের নামের চর্চা বেড়েছে। তিনি কালিয়াগঞ্জ পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের (TMC) প্রাক্তন পুরচেয়ারম্যান কার্তিকচন্দ্র পালের নাম। একুশের ভোটে জোড়া ঘাসফুল শিবির ছেড়ে পদ্মফুল হাতে তুলে নেন। বর্তমানে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক পদে নিযুক্ত। কালিয়াগঞ্জ (Kaliaganj) পুরবোর্ডের পাঁচবারের চেয়ারম্যান প্রয়াত কংগ্রেসের অরুণ দে সরকারের এক আত্মীয়াকে বিবাহ করার সূত্রে একসময় কংগ্রেসের পুরবোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
তার পর তৃণমূলে যোগ দিয়ে কালিয়াগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান হয়ে শহরের একগুচ্ছ উন্নয়নের কৃতিত্ব অর্জন করেন কার্তিকচন্দ্র পাল। তবে ২০২০ এর ডিসেম্বরে বিজেপিতে যোগ দিয়েই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত হন। যদিও কার্তিকচন্দ্র পাল বলেন, “প্রার্থী সংক্রান্ত কোনও খবর জানা নেই।” অন্যজন কার্তিক মহারাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও দলীয় সূত্রে প্রার্থীপদে কার্তিক মহারাজের নাম রয়েছে বলে জানা যায়।
যদিও দলের জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার বলেন, “অপেক্ষা করুন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঘোষণায় রায়গঞ্জের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে যাবে।” আর ফোনে বিদায়ী সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “আমার জানা নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.