সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ফি মরশুমে ট্রলার নিয়ে উত্তাল নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া, জাল ফেলে মাছ ধরে তীরে ফিরে আসা কিংবা চাষের মরশুমে ধানবীজ রোঁয়া, ধান ঝাড়াই – এসব কাজের মধ্যে দিয়েই কেটেছিল শৈশব। পূর্বপুরুষদের এসব কাজ করেই জীবন কাটবে, হয়ত এমনটাই ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু সব ভাবনাই বদলে গেল একজনকে দেখে। জোড়াফুলের তরুণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। ব্যস, তাঁকে দেখেই একেবারে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন বাপি হালদার। নামটা চেনা লাগছে? হ্যাঁ, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) তিনি মথুরাপুরের তৃণমূল প্রার্থী। ভোটযুদ্ধে নামার পর ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এরকমই কিছু ‘সিক্রেট’ কথা বললেন তিনি। বললেন, অভিষেকই তাঁর রাজনৈতিক গুরু। মোবাইলের ওয়ালপেপারে (Wallpaper) সবসময়ে তাঁর অভিষেকের ছবিই থাকে। বললেন আরও অনেক কিছুই।
মৎস্যজীবী, কৃষিজীবী পরিবারের ছেলে হয়ে রাজনীতিতে এতটা সক্রিয়তা কীভাবে? তার ইতিহাস দীর্ঘ। তৎকালীন বাম শাসনের পতনের দিকটি দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন বাপি হালদার। ফলে ডানপন্থী রাজনীতির দিকে ঝোঁক ছিলই। তার পর ধীরে ধীরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বিরোধী রাজনীতি দেখেছেন। ২০০১ সাল থেকে একেবারে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন বাপি। সেবার তৃণমূল প্রার্থী সত্যরঞ্জন বাপুলির নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজনীতিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। মাঝে অবশ্য ব্যাঙ্কের চাকরিও করেছেন। ২০১৩ সালে প্রথম পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election) প্রার্থী হন। কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তিনি জিতলেও ফলাফল অমীমাংসিত হওয়ায় ২ বছর পর বোর্ড গঠন হয়। প্রধান হন বাপি হালদার।
বড়সড় দায়িত্ব সেই থেকে। তার পর এলাকায় দলের যুব সভাপতি হওয়া এবং পরবর্তী পঞ্চায়েত ভোটগুলিতেও জয়লাভ। ২০২৩ সালে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হন বাপি। আর ২০২৪ সালে আরও বড় লড়াই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে দিল্লির লড়াইয়ে মথুরাপুর (Mathurapur) কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করাই এখন তাঁর লক্ষ্য। সেইমতো চলছে প্রচার। আত্মবিশ্বাসী বাপি বলছেন, ”প্রত্যেক ব্লক নেতা, প্রত্যেক সভাপতি, সাত বিধানসভার ৭ বিধায়ক – সকলের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। সকলে আমার প্রচারে যোগ দিচ্ছেন। রুটিন মেনে সকাল-বিকেল প্রচার করছি। যেখানে যাচ্ছি, জনতার সমর্থন পাচ্ছি। আসলে আশেপাশের গ্রামেও আমি ঘুরে বেড়াই। দিনরাত জনসংযোগ রয়েছে।” তারই মধ্যে অবশ্য জেলা পরিষদের কাজকর্মও করছেন বাপি হালদার।
এখন তো রাজনীতি নিয়ে মহা ব্যস্ত। অবসর পেলে ক্রিকেট, ক্যারাম খেলেন। আর ভালোবাসেন খেতে। উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দা, তার উপর আবার মৎস্যজীবী পরিবারের ছেলে। নোনা জলের মাছ তাঁর বড় প্রিয়। পারসে, ভোলা মাছ পাতে দেখলে আর আনন্দ ধরে না! তবে সর্বভূক বাপি রোদে-গরমে প্রচারে বেরিয়েও খেতে কসুর করছেন না কিছুই। বলছেন, ”যেখানে যাচ্ছি, সেখানকার মানুষজন যা খাওয়াচ্ছে, কর্মী-সমর্থকরা যা খাচ্ছেন, আমিও সকলের সঙ্গে বসে তাই খাচ্ছি। কোনও কিছুতে না নেই।” ভালোবাসেন বেড়াতেও। পাহাড়, সমুদ্রে ঘুরে ফেলেছেন ইতিমধ্যে।
তবে এই সবকিছুর বাইরে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকেই রাজনৈতিক ‘গুরু’ বলে মানেন বাপি। মথুরাপুরের পাশের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক। কিন্তু সেদিক থেকে সতীর্থ নয়, বরং আদর্শ হিসেবেই অভিষেকের পথে হেঁটে লড়াইয়ের হাত মুষ্টিবদ্ধ করছেন। জিতে সংসদ যাওয়াই পাখির চোখ দক্ষিণ ২৪ পরগনার যুব নেতা বাপি হালদারের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.