বাবুল হক, মালদহ: বাবা বলেছিলেন ‘স্ট্যান্ড আপ’! দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। মান রাখলেন বাবার, পরিবারেরও। লোকসভা নির্বাচনে মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রে জিতে প্রয়াত বরকত গনি খান চৌধুরীর গড় বাঁচালেন ডালুপুত্র ঈশা খান চৌধুরী। জেলা কংগ্রেসের রাশ থাকল গনির কোতোয়ালির প্রাসাদেই। রাজ্যজুড়ে যখন তৃণমূল ঝড়ে কূপোকাত বিরোধীরা, ঠিক তখনই গনি খানের খাসতালুক মালদহ দক্ষিণে কংগ্রেস সেই বহাল তবিয়তেই।
মালদহ দক্ষিণে কেন্দ্রে পর পর চারবার জয়লাভ করেছিলেন প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর ভাই ডালু ওরফে আবু হাসেম খান চৌধুরী। ‘অসুস্থ’ থাকায় এই ভোটে আর প্রার্থী হননি ডালু। তাঁর ইচ্ছেয় ‘হাত’ প্রতীকে লড়াই করেন তাঁরই একমাত্র ছেলে ঈশা খান। জিতলেন ডালুপুত্রই। ত্রিমুখী লড়াইয়ে উনিশের নির্বাচনের মতোই তৃতীয় স্থান টপকাতে পারেনি তৃণমূল। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সঙ্গে লড়ে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৬৮ ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেসের ঈশা খান চৌধুরী জিতেছেন। উনিশে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে মাত্র ৮২২২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন ডালু। সেই শ্রীরূপাকেই হারিয়েছেন ডালুপুত্র। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে বিভাজনের রাজনীতির প্রভাব ছিলই। তা ঠেকাতেই তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক ভেঙে যায় বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈষ্ণবনগর, সুজাপুর, মোথাবাড়ি ও মানিকচকে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু এই লোকসভা কেন্দ্রগুলোতে তৃণমূল তিন নম্বর স্থানে গিয়ে ঠেকেছে। তৃণমূল পরিচালিত ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯টি ওয়ার্ডে তৃণমূল জয় পায়নি। সুজাপুর বিধানসভা এলাকায় এক শ্রেণির তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগও উঠেছে। যদিও তৃণমূল প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হান বলেছেন, “আমি প্রচারের সময় পাইনি।” মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী বলেন, “সামসেরগঞ্জে কংগ্রেস অনেক বেশি ভোট পেয়ে গিয়েছে। মোথাবাড়িতেও তৃণমূলের ভোট কংগ্রেস পেয়েছে। ইংরেজবাজার ও মানিকচকে আমরা আশানুরূপ ভোট পেয়েছি। আসলে বিজেপিকে হারানোর জন্য তৃণমূলীরা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন।” জয়ের পর গনি পরিবারের সদস্য ঈশা খান চৌধুরী বলেন, “মালদহের মানুষ আমাদের পরিবারের উপর আস্থা রেখেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। গোটা দেশে ইন্ডিয়া জোট ভালো ফল করেছে। আমি খুশি।”
মালদহের কোতোয়ালির গনি পরিবারের মৌসম নুর এখন তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য। কংগ্রেস সাংসদের সিলমোহর পেলেন ঈশা খান। দু’জনে সম্পর্কে দাদা-বোন। এই ফলাফলে কোতোয়ালি ভবনে রইলেন দু’জন সাংসদ। আগেও দু’জন সাংসদ ছিলেন। ডালু ও মৌসম। এবার ডালুর পরিবর্তে সাংসদের মুকুট উঠল প্রাক্তন বিধায়ক ঈশার মাথায়। উচ্ছ্বসিত মালদহের কংগ্রেস নেতৃত্ব। উল্লেখ্য, মালদহের গনি পরিবারের রাজনীতির ধারাবাহিকতার ইতিহাস অনেকটা বাদশাহী ঘরানার মতোই। বিদেশ থেকে ফিরেই একের পর এক রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে রুবি, ডালু, লেবু, ইশাদের। বটবৃক্ষ বলতে ছিলেন সেই একজনই। আবু বরকত আতাউল গনি খান চৌধুরী। আটের দশকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বরকত সাহেবের ডাকে কানাডা থেকে মালদহের কোতোয়ালি ভবনে ফিরেছিলেন তাঁর বোন রুবিনুর। তার পর ফিরে আসেন ভাই ডালু ওরফে আবু হাসেম খান চৌধুরী। দুজনই গনির নির্দেশ মতো রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন। রুবিনুরের প্রয়াণের পর রাজনীতিতে যোগ দেন তাঁর মেয়ে মৌসম নুর। আবু নাসের ওরফে লেবুর পথটা অবশ্য মসৃণ ছিল না। সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরে দাদা বরকতের সঙ্গে কার্যত লড়াই করে কোতোয়ালিতে ঠাঁই নিতে হয়েছিল লেবুকে। কানাডা থেকে ফিরে ২০১১ সালে বৈষ্ণবনগর কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করে কংগ্রেসের বিধায়ক হন ইশা। তার পর ২০১৬ সালে সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কাকা তৃণমূলের লেবুবাবুকে ঈশা খান পরাজিত করেন। ২০২১ সালে সুজাপুর বিধানসভায় জিততে পারেননি ডালুপুত্র। এবার বিজেপিকে হারিয়ে পৌঁছে গেলেন দিল্লির সংসদে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.