সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: যে সময় তিনি জন্মেছেন, সেটা বাম জমানার মধ্যগগনে থাকা সময় নয়। বরং ধীরে ধীরে লাল সূর্য ঢলে পড়ছিল পশ্চিমে। সেটা অনেকটাই বামেদের ক্ষয়িষ্ণু সময়। কিন্তু কাস্তে-হাতুড়ি-তারার ধার কতটা, তা বেশ বুঝতে পেরেছিল তখনকার সদ্য যৌবনে পা রাখা প্রজন্ম। ক্ষমতা হারানো কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন তখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বেশ জাঁকিয়ে বসে ছিল। বিরোধী এসএফআই (SFI) সদস্যদের উপর কারণে-অকারণে অত্যাচার চলত। আর তার প্রতিস্পর্ধী হিসেবে বাম ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হয়ে উঠেছিল কঠিন। এই অবস্থাতেই সম্পূর্ণ কংগ্রেসি ঘরানার ছেলেটি ঝুঁকেছিল বামপন্থী (Left Front) আদর্শের দিকে। মার খেতে খেতে একদিন দাঁড়িয়েছিল ঘুরে। তার পরবর্তী অধ্যায় ইতিহাস। বলা হচ্ছে, চব্বিশের লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবারের সিপিএম (CPM) প্রার্থী, তরুণ তুর্কী প্রতীক-উর রহমান। যিনি নিজেই সংগ্রামের ‘প্রতীক’। তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী তথা দুবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নিঃসন্দেহে কঠিন লড়াই। কিন্তু তেমনটা মোটেই মনে করেন না প্রার্থী নিজে। ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-এর সঙ্গে একান্ত আড্ডায় খুলে সব কথাই বললেন প্রতীক-উর।
ডায়মন্ড হারবারের (Diamond Harbour) বাসুলডাঙার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে প্রতীক-উর। বড় হয়েছেন মামারবাড়িতে। সে মামারবাড়ি আবার কংগ্রেসি পরিবার। মামারা কেউ কেউ পঞ্চায়েত স্তরের নেতা। সেই বাড়িতে অহরহ থাকার পরও ডানপন্থী রাজনীতি পছন্দ ছিল না প্রতীক-উরের। বরং তাঁকে টানত বামেদের লাল নিশান, ধারালো স্লোগান। স্কুলজীবন শেষ করে কলেজে পা দিয়েই নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন এসএফআইতে (SFI)। সেটা মোটামোটি ২০০৮-০৯ সাল। পরের বছরই ডায়মন্ড হারবারের ফটিকচাঁদ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিএস (General Secretay) হন। টানা বেশ কয়েক বছর সেই পদে ছিলেন প্রতীক-উর।
কলেজের ছাত্র সংসদে তাঁর পারফরম্যান্স নজরে পড়েছিল রাজ্য এসএফআই নেতৃত্বের। ২০১৭ সালে এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি হন প্রতীক-উর। পরের বছর সিপিএমের সদস্যপদ পান। আইন (LLB) পাশ করলেও রাজনীতির টানে কখনও চাকরি করেননি। লাল পার্টির হোলটাইমার বা সর্বময়ের কর্মী হিসেবে নাম লেখান প্রতীক-উর। আর চব্বিশের নির্বাচনে সরাসরি সিপিএমের প্রার্থী। বছর তিরিশের প্রতীক-উরের রাজনৈতিক জীবন সংক্ষেপে এই। পার্টিই তাঁর জীবন, কেরিয়ার। এর বাইরে সময় পেলেন পড়াশোনা করেন। সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ রয়েছে প্রতীক-উরের। ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে জানালেন, ”বই পড়তে ভালো লাগে। সময় পেলেই পড়ি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তো আছেনই। এর বাইরে খুব ভালো লাগে হুমায়ুন আহমেদের লেখা গল্প, উপন্যাস।” সেসব রচনায় হয়ত নিজের জীবন সংগ্রামের ছায়া দেখতে পান সিপিএমের তরুণ তুর্কী।
ডায়মন্ড হারবারে তো কঠিন লড়াই। কী বলবেন প্রতিপক্ষদের? এর জবাবেই চমকে দিলেন প্রতীক-উর। বললেন, ”রাজনীতিতে আমি কাউকে প্রতিপক্ষ বলে মনে করি না। কারণ, আমি বিশ্বাস করি যে অন্য দল থেকে যে প্রার্থীরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের লক্ষ্য আর আমার লক্ষ্য একই। তাঁরাও ডায়মন্ড হারবারের উন্নতি চান, আমিও তাই চাই। তাই আসুন, একসঙ্গে হাতে হাত রেখে আমরা ডায়মন্ড হারবারবাসীর জন্য কাজ করি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.