সৈকত মাইতি, তমলুক: দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন (Lok Sabha Election 2024) অর্থাৎ পাঁচের দশকেই তৈরি হয়েছিল তমলুক লোকসভা (Tamluk Lok Sabha constituency। এই লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) থেকে সাংসদ নির্বাচিত হলেও বিজেপি (BJP) এখনও খাতা খুলতে পারেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্ত, সুশীল ধাড়ার মতো নেতারা এই আসনে বিগত দিনের সাংসদ পদ অলংকৃত করেছিলেন। এবার সেই আসনের লড়াইয়ে মূল লড়াই হবে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। তমলুক লোকসভা এখনও খাতায় কলমে তৃণলমূলের। তবে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়ার পর থেকেই তাঁর ভাই সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী বিজেপি ঘেঁষা হয়ে পড়েন। অবশেষে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে দিব্যেন্দুকে এবার প্রার্থী করেনি বিজেপি। সেটাই কি তুরুপের তাস হবে গেরুয়া শিবিরের? নাকি ব্যুমেরাংয়ে জিতবে তৃণমূল?
এলাকার জনবিন্যাস
২০১১ সালের শেষ জনগণনা অনুযায়ী, তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৮ লক্ষ ৪৭ হাজার ৯৫২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৯ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫২০ জন। মহিলা সংখ্যা ৯ লক্ষ ১৩৯৩ জন। তৃতীয় লিঙ্গ ভোটার ৩৯ জন। ৮৫.২৪ শতাংশ হিন্দু ভোটার। সংখ্যালঘু ভোটার ১৪.৫৯ শতাংশ। এদিকে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৮৮.৩৭ শতাংশ বাস করেন গ্রামে। শহুরে ভোটার ১১.৬৩ শতাংশ।
ইতিহাস
১৯৫২ সাল থেকে ৬৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেস (Congress) এই লোকসভা আসনে ক্ষমতায় ছিল। তার পর গড়ে ওঠা বাংলা কংগ্রেসের দখলে ছিল এই কেন্দ্র, ৬৭ থেকে ৭৭ সাল পর্যন্ত। দুটি ভিন্ন দল ক্ষমতায় আসলেও সাংসদ পদে ছিলেন সতীশচন্দ্র সামন্ত। এর পর এই লোকসভা আসনে জয় পায় জনতা পার্টি। একদফার সাংসদ ছিলেন সুশীলকুমার ধাড়া। ১৯৮০ থেকে ৯৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। এর পর পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আসনটি ছিল বামেদের দখলে। ২০০৯ থেকে এখনও পর্যন্ত এই কেন্দ্র তৃণমূলের হাতে রয়েছে।
গত এক দশকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি
রাজ্যের মসনদে তৃণমূলের বসার পিছনে সিঙ্গুরের পাশাপাশি অন্যতম কারণ ছিল নন্দীগ্রামের (Nandigram) জমি আন্দোলন। এই নন্দীগ্রাম তমলুক লোকসভার অন্তর্গত। তাই স্বাভাবিক ভাবে রাজ্যে তৃণমূল আসার পর থেকেই বা বলা ভালো তৃণমূলের ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই এই লোকসভার অনেকাংশ তৃণমূলের দখলে যায়। তার পর থেকেই প্রত্যেক নির্বাচনে উড়ছে সবুজ আবির। অধিকারী পরিবারের একচ্ছত্র প্রভাব রয়েছে এই কেন্দ্রে। তবে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) বিজেপিতে যাওয়া সবুজ গড়ে কিছুটা আঘাত হেনেছেন। গত বিধানসভায় ভোটে নন্দীগ্রাম আসনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) হারান শুভেন্দু অধিকারী। তার পর থেকেই তৃণমূলের প্রভাব কিছুটা কমেছে।
প্রার্থী
এইবার তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের তিন প্রার্থী বহিরাগত। তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন আইটি সেলের রাজ্য সভাপতি তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। বিজেপি প্রার্থী করেছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সিপিএম এই লোকসভায় তরুণ মুখ হিসেবে ভরসা রেখেছে পেশায় আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর।
হালফিলের হকিকত
তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভা রয়েছে । তমলুক, পূর্ব পাঁশকুড়া, ময়না, নন্দকুমার, মহিষাদল, হলদিয়া, নন্দীগ্রাম। ২০২১ এর বিধানসভার হিসেবে অনুযায়ী তমলুক লোকসভার মধ্যে পাঁশকুড়া, পূর্ব তমলুক, নন্দকুমার ও মহিষাদল বিধানসভা তৃণমূলের দখলে। এবং ময়না, হলদিয়া, নন্দীগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিধানসভা রয়েছে বিজেপির দখলে। লোকসভার অন্তর্গত দুটি পুরসভা রয়েছে তৃণমূলের দখলে।
সম্ভাবনা
২৪-এর লড়াইয়ে এই লোকসভা কেন্দ্রের তিন দলের প্রার্থী ‘বহিরাগত’।যা নিয়ে একটা ক্ষোভ রয়েছে সাধারণের মধ্যে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভোগাবে শাসককে। অভিজিৎকে প্রার্থী করায় ক্ষোভ রয়েছে বিজেপির মধ্য়েও। সিপিএম প্রার্থী দেওয়ায় বামের ভোট রামে যাওয়া আটকাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাতে এই লড়াই ত্রিমুখী হয়ে উঠেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.