Advertisement
Advertisement

Breaking News

Lok Sabha Election 2024

মমতার রাজনৈতিক উত্থানকেন্দ্র যুবনেত্রীর লড়াই, শক্তিশালী CPM প্রার্থীও, যাদবপুরে জিতছে কে?

তৃণমূল-বিজেপি-সিপিএমের লড়াইয়ে বেশ কিছুটা ভোট কাটবে আইএসএফও।

Lok Sabha Election 2024: In depth analysis of Jadavpur constituency
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 16, 2024 6:31 pm
  • Updated:April 16, 2024 7:35 pm  

দেবব্রত মণ্ডল: কিছুটা শহরাঞ্চল এবং তা একেবারেই কলকাতা ঘেঁষা। বেশিরভাগটাই মফস্বল এলাকা। সাংস্কৃতিক দিক থেকে যথেষ্ট অভিজাত। কলকাতা লাগোয়া যাদবপুর (Jadavpur) লোকসভা কেন্দ্রকে এককথায় বর্ণনা করা কঠিন। রাজ্য রাজনীতির অন্যতম হাইভোল্টেজ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। প্রত্যেক নির্বাচনে যাদবপুরের দিকে নজর থাকে রাজনৈতিক থেকে সাংস্কৃতিক সব মহলই। তার অন্যতম কারণ, এখান থেকে নামী নামী ব্যক্তিত্বকে সাংসদ হিসেব পেয়েছেন যাদবপুরবাসী। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনও (Lok Sabha Election 2024) তার ব্যতিক্রম নয়। এবার এখানকার প্রার্থী বাছাইয়েও চমক দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এবারের লড়াই মূলত তরুণ প্রজন্মের। কেমন হবে এবার যাদবপুরের নির্বাচন, তারই আগাম ঝলক বুঝে নিতে এই প্রতিবেদন।

ইতিহাস
সত্তর দশকে যখন বঙ্গ রাজনীতির রং বদলে দেওয়ার লক্ষ্যে বামপন্থীদের লড়াই জোরদার হচ্ছে, সেই সময় থেকেই আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) যাদবপুর। এলাকার চরিত্রের কারণেই হয়ত এখানকার মানুষ রাজনৈতিক দিক থেকে অতি সচেতন। শুধু রাজনীতিই নয়, যে কোনও বিপ্লবের ক্ষেত্রই এই এলাকা। ১৯৭৭ সালে প্রথম যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র গঠিত হয়। জাতীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত পরিচিত সিপিএম (CPM) নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রথম এখান থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে ফের তাঁকেই জনপ্রতিনিধি করে সাংসদে পাঠান যাদবপুরবাসী। পরে ১৯৮৪ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেই থেকে যাদবপুরে অপ্রতিরোধ্য তৃণমূল।

Advertisement

[আরও পড়ুন: এখনও কেন সিঙ্গল? মনের কথা ফাঁস করলেন মিমি]

জনবিন্যাস
যাদবপুর কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ২০ লক্ষ ১৯ হাজার ৮৭৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লক্ষ ২৮৬ জন, মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১০ লক্ষ ১৯ হাজার ৪৭০। এই কেন্দ্রে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১১৭ জন।

বিধানসভা কেন্দ্র

যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র –

  • ভাঙড়
  • বারুইপুর পূর্ব
  • বারুইপুর পশ্চিম
  • সোনারপুর উত্তর
  • সোনারপুর দক্ষিণ
  • টালিগঞ্জ
  • যাদবপুর

অতীত নির্বাচনের ফলাফল

১৯৮৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে তাঁকে হারিয়ে সিপিএমের মালিনী ভট্টাচার্য দুবার সাংসদ হন। ১৯৯৬ থেকে আবার যাদবপুরের রাজনৈতিক হাওয়া বদল হয়। সেবার নেতাজি পরিবারের সদস্য তথা শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা বসু ভোটে জিতে যান দিল্লির দরবারে। পরপর তিনবার তিনি এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ হয়েছেন। ২০০৪ সালে আবার লাল নিশান ওড়ে যাদবপুরে। সেবার কৃষ্ণা বসুকে হারিয়ে লোকসভা ভোটে জেতেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। পরেরবার ২০০৯ সালে এখান থেকে জেতেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী কবীর সুমন। ২০১৪ সালে কৃষ্ণা বসুর ছেলে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ সুগত বসু যাদবপুর কেন্দ্রের জনপ্রতিনিধি হন। পরেরবার, ২০১৯ সালে টলিউড নায়িকা মিমি চক্রবর্তীকে সাংসদ হিসেবে পান যাদবপুরবাসী।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি

গত পঞ্চায়েত, বিধানসভা এবং পুরসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে এখানে এগিয়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ লোকসভা ভিত্তিক সাতটি বিধানসভার মধ্যে শুধুমাত্র ভাঙড় আসনটিতেই আইএসএফ প্রার্থী নওশাদ সিদ্দিকী জয়ী হয়েছিলেন। বাকি ৬টিতেই তৃণমূলের জয়জয়কার। তবে এই ভাঙড়ই কিন্তু এখানকার রাজনৈতিক অশান্তির কেন্দ্রবিন্দু। বিভিন্ন নির্বাচনেই ভাঙড়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতি চেনা হয়ে উঠেছে আমজনতার কাছে। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এখানকার একাধিক এলাকায় ছড়িয়েছিল রাজনৈতিক হিংসা।

[আরও পড়ুন: ‘ব্যালটের সময় কী হত আমরা জানি’, ইভিএম-ভিভিপ্যাট মিলিয়ে দেখার দাবিতে জানাল সুপ্রিম কোর্ট]

প্রার্থী পরিচয়

এবার এই কেন্দ্রের লড়াই যথেষ্ট জমজমাট। তার কারণ যাদবপুরের তিন প্রার্থীই মোটের উপর তরুণ প্রজন্মের। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত বিজেপি প্রার্থী ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক। গত বিধানসভা নির্বাচনে বোলপুর থেকে বিজেপি (BJP) প্রার্থী হয়ে হেরে গিয়েছিলেন। বিজেপির তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে সুপরিচিত তিনি। এবার দিল্লির লড়াইয়ে তিনি যাদবপুরের প্রার্থী।

BJP-RSS to Jadavpur University, Exclusive Interview with BJP's Anirban Ganguly | Sangbad Pratidin
যাদবপুরের লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়।

এখানে তৃণমূলের প্রার্থী দলের যুব সংগঠনের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh)। তিনি এখানকার ভূমিকন্যা। ময়দানে নেমে রাজনীতি করার পাশপাশি বক্তা হিসেবেও নিজেকে তৈরি করেছেন সায়নী। একদা বাম রাজনীতিতে আস্থা থাকলেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সারল্য ও শক্তির টানেই ঘাসফুল শিবিরের সৈনিক হয়েছেন তিনি। আর তাঁরই মতো সাধারণ সাজে জনতার মাঝে চলে যাওয়া সায়নীর একটা ইউএসপি বটে! আন্তরিকতায় তিনি যাদবপুরের ভোটারদের সমর্থন কতটা টানতে পারেন, তা দেখার।

Yuva TMC leader Saayoni Ghosh second time summon by ED
যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ প্রতিদিনের প্রচারেই ঝড় তুলছেন। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল, বিজেপির বিরুদ্ধে যাদবপুরের সিপিএমের হয়ে লড়ছেন তরুণ তুর্কী সৃজন ভট্টাচার্য। রাজ্য এসএফআই-এর দুঁদে নেতা, সুবক্তা সৃজনের একটা ন্যূনতম জনপ্রিয়তা আছেই। প্রচারের আবহে অনেক জায়গাতেই জনজোয়ার লালে লাল। কিন্তু ভোটবাক্সে তার কতটা প্রতিফলন হবে, সেটা সময় বলবে। এছাড়া রয়েছেন আইএসএফ প্রার্থী মজনু লস্কর ও এসএইউসিআই-এর কল্পনা নস্কর।

যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী, এসএফআইয়েরর প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।

সম্ভাবনা
যাদবপুর কেন্দ্রের লড়াই এবার বেশ জমজমাট। ভোটে কাজ করবে বেশ কিছু ফ্যাক্টর। শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান বাঙালি ভোটারদের সমর্থন একদিকে থাকবে। নতুন প্রার্থীদের উপর কে কতটা ভরসা করবেন, সেটা একটা বড় বিষয়। এছাড়া বেশ কিছু এলাকা একেবারেই বামেদের ঘাঁটি। সেখানে বছরের পর বছর ধরে বামেদের ভোটব্যাঙ্ক বেশ খানিকটা অক্ষুণ্ণ থাকে। জনসংযোগে একে অপরকে টেক্কা দিচ্ছেন সায়নী ও সৃজনকে। তুলনায় কম দেখা যাচ্ছে বিজেপির অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে ভাঙড়ের জনসমর্থন। তাঁরা আইএসএফ প্রার্থীকেই সমর্থন করবেন বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। আবার রয়েছেন শহরাঞ্চল টালিগঞ্জের ভোটাররা। ভাঙড়, টালিগঞ্জের ভোট কেউ একার ঝুলিতে টানতে পারলে তাঁর জয়ের রাস্তা মসৃণ হবে। সবমিলিয়ে, সায়নী-সৃজন-অনির্বাণের ত্রিমুখী লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবেন, তা দেখার জন্য ৪ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement