সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ডিলিমিটেশনের পর ২০০৯ সালে এই লোকসভা কেন্দ্র গঠিত হয়। তফসিলি জাতি সংরক্ষিত এই কেন্দ্রটি। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া, পূর্বস্থলী উত্তর, পূর্বস্থলী দক্ষিণ, কালনা, মেমারি, জামালপুর ও রায়না বিধানসভা নিয়ে গঠিত এই লোকসভা কেন্দ্র। মূলত কৃষি প্রধান এলাকা। ধান ও আলু উল্লেখযোগ্য ফসল। জেলার তাঁতবলয়ও এই কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে।
জনবিন্যাস
এসসি ভোটার প্রায় ৩১.২ শতাংশ, এসটি ভোটার প্রায় ৮.১ শতাংশ, মুসলিম ভোটার প্রায় ২২.১ শতাংশ, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ০.০২ শতাংশ, খ্রিস্টান ০.২৭ শতাংশ, জৈন ০.০২ শতাংশ, শিখ ০.২২ শতাংশ। গ্রামীণ ভোটার ৮৫.৫ শতাংশ, শহুরে ভোটার প্রায় ১৪.৫ শতাংশ।
ইতিহাস
২০০৯ সালে ডিমিলিটেশনের পর গঠিত এই লোকসভা আসন দখল করেছিল সিপিএম। সাংসদ হন পেশায় চিকিৎসক অনুপ সাহা। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে পর পর দুইবার জিতেছেন তৃণমূলের সুনীল মণ্ডল।
গত এক দশকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি
২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় এই কেন্দ্রের পাঁচটি বিধানসভা বামেদের দখলে ছিল। কাটোয়া বিধানসভা ছিল কংগ্রসের দখলে। আর নাদনঘাট বিধানসভা ছিল তৃণমূলের। ডিলিমিটেশনের পর নাদনঘাট বিধানসভা এখন আর নেই। নতুন বিধানসভা হয়েছে পূর্বস্থলী দক্ষিণ। ২০১১ সালে পালাবদল ঘটে রাজ্যে। সেই সময় এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে ৫টি দখলে যায় তৃণমূলের। একটি কংগ্রেসের ও একটি সিপিএমের দখলে যায়। ২০১৪ লোকসভা আসনটি দখল করে তৃণমূল। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে জামালপুর ও পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে বামেরা জিতেছিল। বাকি ৫টিতে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। ২০১৯ লোকসভা ভোটে তৃণমূল জেতে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সবগুলি বিধানসভা আসনই দখল করে।
এই এলাকা বর্তমানে তৃণমূলের শক্তঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। কাটোয়া বিধানসভা এলাকা কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি ছিল একসময়। রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কংগ্রেসের মুখ। বর্তমানে তিনি কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক। আবার পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতিও রবীন্দ্রনাথবাবু।
এই লোকসভা এলাকার চারটি পুরসভা রয়েছে, কাটোয়া, দাঁইহাট, কালনা ও মেমারি। চারটি পুরসভাই বর্তমানে তৃণমূলের দখলে রয়েছে। এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রায়না-১ ও ২, জামালপুর, মেমারি-১ ও মেমারি-২ এর একাংশ, কালনা-১ ও ২, পূর্বস্থলী-১ ও ২ এবং কাটোয়া-১ ও ২ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকা। সবগুলি পঞ্চায়েত সমিতিই তৃণমূলের দখলে রয়েছে। গত পঞ্চায়েতে নির্বাচনে রায়না-১ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র একটি বামেরা দখল করেছে। বাকিগুলি তৃণমূলের। রায়না-২ পঞ্চায়েত সমিতির ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের। জামালপুরের ১৩টির মধ্যে ১৩টি, মেমারি-১ এর ১০টির মধ্যে ১০টি, কালনা-১ এর ৯টির মধ্যে ৯টি, কালনা-২ এর ৮টির মধ্যে ৮টি, পূর্পস্থলী-১ এর ৭টির মধ্যে ৭টি, কাটোয়া-১ এর ৯টির মধ্যে ৯ টি, কাটোয়া-২ এর ৭টির মধ্যে ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে রয়েছে। পূর্বস্থলী-২ ব্লকের ১০ টির মধ্যে ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি।
হালফিলের হাল হকিকত
২০২১ লোকসভা নির্বাচনের আগে কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বিজেপিতে যোগদান করেন। এখনও বিজেপিতেই আছেন। সেই সময়ই বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সাংসদ সুনীল মণ্ডলও বিজেপিতে যোগদান করেন। বিধানসভার মনোনয়নের সময় বিজেপি প্রার্থীদের সঙ্গে মিছিল করে এসে বর্ধমানে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিককে আঙুল উঁচিয়ে শাসাতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সশস্ত্র কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী নিয়ে ঘুরতেন তিনি। ২০২১ বিধানসভার ফল ঘোষণার পর মোহভঙ্গ ঘটে সুনীলের। ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নিয়েছিলেন। বেশ কয়েকমাস পর ফের তৃণমূলের ফেরার তোরজোর করেন। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছেড়ে দেন। না ডাকলেও হাজির হয়ে যেতেন তৃণমূলের কর্মসূচিতে। সেটা দিল্লিতে সংসদ ভবনের সামনে তৃণমূল সাংসদদের ধরনা কর্মসূচিই হোক বা লোকসভা কেন্দ্রের কর্মসূচি অযাচিতভাবেই সুনীল হাজির হয়ে বোঝাতে চাইতেন তৃণমূলেই আছেন। বার বার দল বদলে ওস্তাদ সুনীল মণ্ডলকে এবার আর টিকিট দেয়নি তৃণমূল।
সম্ভাব্য প্রার্থী
সম্ভাবনা
সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচন, পুরভোট ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরিখে পাল্লা ভারী তৃণমূলেরই। গত লোকসভা নির্বাচনে সব থেকে বড় ফ্যাক্টর হয়েছিল বাম ভোট রামে ট্রান্সফার হওয়া। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনাও বড় ফ্যাক্টর হয়েছিল সেবারের ভোটে। এই লোকসভা কেন্দ্রের একাংশে পদ্মশিবির শক্ত ঘাঁটি গড়ার চেষ্টা চালালেও সভাবে সফল হয়নি। পদ্মশিবিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও বেড়েছে। সিপিএম হারানো জমি ফিরে পেতে শান দিচ্ছে কাস্তেতে। কিন্তু তৃণমূলের চিন্তার তেমন কারণ নেই বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.