দেব গোস্বামী, বোলপুর: সংগঠন হোক কিংবা জনসংযোগ অথবা ভোটের দিন টোটকা। সবই এতদিন ধরে একা হাতে সামলেছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এই প্রথম লোকসভা ভোটের মতো বড় লড়াইয়ে তিনি নেই। জেলার ঘাসফুল শিবির লড়ছে তাঁকে ছাড়াই। আর তার প্রভাব দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট বীরভূমের মাটিতে। বোলপুরে (Bolpur) অনুব্রতর বাড়ি থেকে দলীয় কার্যালয় – সব ফাঁকা, শুনশান। ভোট-উত্তাপের লেশমাত্র নেই। জেলা তৃণমূল নেতারা বলছেন, ”সংসারে অভিভাবক না থাকলে যেমন হয়, তেমনই তাঁর অভাব বোধ করছি।”
প্রতি নির্বাচনে বাঁধাধরা রুটিন ছিল অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal)। তিনি শিবভক্ত। ভোটের দিন সকাল সকাল শিবের মাথায় জল ঢেলে, পুজো সম্পন্ন করে বেরতেন নিচুপট্টির বাড়ি থেকে। সঙ্গীদের নিয়ে ভোট দিতে যেতেন কালিকাপুর ভাগবত প্রাথমিক স্কুলের বুথে। তার পর নেতাজি রোডে তৃণমূলের (TMC) পার্টি অফিসে পৌঁছে যেতেন। সারাদিনের জন্য সেটাই অনুব্রতর কন্ট্রোল রুম। মাঝে একটু খাওয়াদাওয়া। শারীরিক অসুস্থতার জন্য খাওয়াদাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। কর্মীরাই বাড়ির খাবার এনে দিতেন। ওই দলীয় কার্যালয় বসেই গোটা জেলার ভোটচিত্র নখদর্পণে রাখতেন। দিতেন ‘গুড়-বাতাসা’, ‘চড়াম-চড়াম’ দাওয়াই! কোথাও গন্ডগোলের খবর পেলে তাঁর নির্দেশেই অ্যাকশনে পৌঁছে যেতেন তৃণমূল কর্মীরা।
এই প্রথম সেই চিত্রটা সম্পূর্ণ উধাও বীরভূমের (Birbhum) রাঙামাটিতে। গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় জেলে বন্দি গত দুবছর ধরে। চব্বিশের নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) ভোটের আসল রং যেন হারিয়েছে বীরভূম। নিচুপট্টির বাড়ি ও দলীয় কার্যালয় আজ পুরো খাঁ খাঁ। পাড়ায় কেউ কথা বলতে চাইছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ”আগে ভোটের দিন শয়ে শয়ে গাড়ি থাকত, আর আজ এসব কিছুই নেই।”
এখন বীরভূমে ঘাসফুল সংগঠন সামলান নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বাধীন কোর কমিটি। তাঁরাই ভোটের দায়িত্বে রয়েছেন। বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ বলেন, ”অনুব্রত মণ্ডলকে দেখে রাজনীতির পথ চলা শুরু। তিনি আজ না থাকলেও, আমরা তাঁর আদর্শেই চলছি। তিনি জেলবন্দি হওয়ার পর থেকে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এখানকার সংগঠন দেখেছেন, গাইড করেছেন। বহুবার এসেছেন এখানে। ২০১১ সালের আগে বীরভূমের ভোটে রক্তপাত ছাড়া কিছুই হত না। এখন তো শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়। লোকজন উৎসবের আবহে ভোট দিচ্ছেন। তবে একটা সংসারে গার্জেন না থাকলে যেমন হয়, সেই অভাব বোধ হচ্ছে।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.