ফাইল ছবি
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মানভুঁইয়া হোক বা কুড়মালি। সাবেক মানভূমের হাসি-কান্না, সুখ দুঃখের জীবনগাথা তো ওই ভাষাতেই। তাই মনের কাছাকাছি পৌঁছতে পুরুলিয়ায় ভোট প্রচারের হাতিয়ার ওই ভাষাই! কুড়মি ও জনজাতিদের মন পেতে কুড়মালি ও মানভুঁইয়া ভাষায় গান লিখে শুরুতেই ভোট প্রচার মাতিয়ে দিচ্ছে শাসক তৃণমূল থেকে বিরোধীরা সবাই। শুধু যে এবারের লোকসভা ভোট তাই নয়, ফি বছরই রাজনৈতিক দলের প্রচারে মানভুঁইয়া এবং কুড়মালি ভাষার গানে গানে ভোটের প্রচার চলে পুরুলিয়া জেলায়। শুধু পালটে যায় কথা ও সুর। এই গান সাউন্ড সিস্টেমে বা মোবাইলে বাজলে সুরের তালেই শরীরে যেন দোল দেয়। লোক সংস্কৃতির পীঠস্থান পুরুলিয়ায় ওই ভাষার গানে ভোটদানের বার্তা যেন আরও সহজ হয়ে যায়। তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর সমর্থনে মাহরাই মাহাতোর কুড়মালি গান এখন তো তামাম জেলায় সুপারহিট। যা রীতিমতো ভাইরাল।
‘সাসথঅ সড়প, বিজলি পানি,/উননঅনেই দিদিক বানি।/ দিদিক নামে কিরা লেইল,/ইবার ভটেঁ হেতেক খেইল।’ এর বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘‘স্বাস্থ্য, রাস্তা, বিদ্যুৎ, জল উন্নয়নেই দিদির কথা, দিদির নামে নিয়েছি শপথ এবার ভোটে খেলা হবে।’’ ‘খেলা হবে’ গানের অনুকরণেই এই কুড়মালি ভাষায় গান। এছাড়া এই প্রার্থীর সমর্থনেই মানভুঁইয়া ভাষায় লেখা লেখক রাধানাথ মাহাতো ও চিরঞ্জিৎ মুখোপাধ্যায়ের গান সোশ্যাল সাইট থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। এই গানটি গেয়েছেন লেখক চিরঞ্জিৎ মুখোপাধ্যায়। পুরুলিয়ার তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর মনোনয়নের দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই দু’টি গান রিলিজ হবে। রাধানাথ মাহাতো কবি, লেখক ও পুরুলিয়া ১ ব্লকের গাড়াফুসড় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি মানভুঁইয়া, কুড়মালি সাহিত্যচর্চা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এই ভোট প্রচারের গান এখনও রিলিজ হয়নি। প্রার্থীর মনোনয়নের দিন তা প্রকাশ পাবে। ট্রেলার বার করেছি, তাতেই সুপারহিট।’’
প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর কথায়, ‘‘সাবেক মানভূমের একটা বড় অংশের মানুষ মানভুঁইয়া ভাষাতেই কথা বলেন। তাই সেই ভাষাতেই ভোট প্রচারের জন্য গান বাঁধা হচ্ছে। যাতে খুব সহজেই আমরা এই মানভূমের মানুষের কাছে পৌঁছতে পারি।’’ এক্ষেত্রে বিরোধী প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। এই কেন্দ্রের কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতোর সমর্থনে ‘এমপি ভোটে দেখাই দেবেন কুড়মি রাক পাওয়ার।’ এই শিরোনামে গান গেয়েছেন শিল্পী মমতা মাহাতো। প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতোর কথায়, ‘‘পুরুলিয়া লোকসভায় কুড়মি জনজাতির ভোটার ৩৫ শতাংশ। এই সমগ্র ভোট আমাদের ঝুলিতেই পড়বে। কেন্দ্র থেকে রাজ্য আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কেউ কিছু ভাবেনি। জাতিসত্ত্বার লড়াই-এ আমাদের ভোটে দাঁড়ানো। প্রচারের কুড়মালি গানেও সেকথাই তুলে আনা হয়েছে।’’
একইভাবে তৃণমূল ও কুড়মি সমাজের পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরও কুড়মালি ও মানভুঁইয়া ভাষায় গান রচনা করে প্রচার করবে। তার প্রস্তুতি চলছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, ‘‘কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের কুড়মালি ও মানভুঁইয়া ভাষায় ভোট প্রচারের গান প্রকাশ পাবে।’’ পিছিয়ে নেই কংগ্রেসও। মানভুঁইয়া ভাষার সম্প্রতি বিখ্যাত গান ‘ঝলমল’-র অনুকরণে নেপাল মাহাতোর সমর্থনেও প্রচার চলছে। শংকর তন্তুবায় ও মীরা দাসের এই গান একমাস আগে ইউটিউবে পোস্টের পর যার ভিউ ৯৭ লাখ! এই গান প্রেমের হলেও তা প্রচারে ব্যবহার করেছে কংগ্রেস। প্রার্থী নেপাল মাহাতোর কথায়, ‘‘যেটাই ভাইরাল বা সুপারহিট হয়। তাকেই ব্যবহার করে কোনও বার্তা দিলে তা সবার কাছেই যেন সহজ হয়ে ওঠে। তাই দলের কর্মীরা ভোট প্রচারে ওই গানের সুরকে হাতিয়ার করেছে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.