Advertisement
Advertisement
Tribal status

ভোটের আগে গালভরা আশ্বাসই সার! কবে মিলবে জনজাতির স্বীকৃতি? প্রশ্ন ধীমালদের

ভোট আসে ভোট যায়, পূরণ হয় না প্রতিশ্রুতি।

Lok Sabha Election 2024: Dhimals asking for Tribal status

নিজস্ব চিত্র।

Published by: Paramita Paul
  • Posted:April 9, 2024 5:17 pm
  • Updated:April 9, 2024 5:48 pm

তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: ভোট আসে ভোট যায়। নির্বাচনের আগে নেতারা আসেন মেলে গালভরা আশ্বাস। ধীমালদের জনজাতি স্বীকৃতি দেওয়ার একাধিক প্রতিশ্রুতি পেতে পেতে একেবারে হতাশ তাদের সম্প্রদায়ের প্রায় দু’হাজার মানুষ। হতাশ হলেও ফের একবার জনজাতি স্বীকৃতি পাবার আশায় কেন্দ্র সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকবেন ধীমাল জনজাতিরা।

মূলত, নেপালের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা থেকে ব্রিটিশ আমলে ধীমাল জনজাতির একাংশ এদেশে চলে এসে বসবাস শুরু করেন। একসময় নেপালের ঝাঁপা জেলার কনকাই নদী থেকে অসম পর্যন্ত ১৫ হাজার ধীমালের বসবাস ছিল। তবে বর্তমানে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নকশালবাড়ি ব্লকের মণিরাম জোতের কেতুগাবুর গ্রামে বসবাস শুরু করে এই জনজাতির মানুষেরা। এছাড়াও হাতিঘিষা, খড়িবাড়ির বুড়াগঞ্জ, ফাঁসিদেওয়া ব্লক ও কিছু মানুষ দার্জিলিংয়ে থাকেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: নেশার পর ছাত্রীকে ধর্ষণ! অভিযুক্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র]

কেতুগাবুর জোতে বাস করেন গর্জন মল্লিক। ধীমাল জনজাতির ঐতিহ্য রক্ষায় সংগ্রাম করে চলেছেন গর্জন মল্লিক। প্রায় ৪৩ বছর ধরে চলছে উপজাতির অধিকার রক্ষার সংগ্রাম। বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র জনজাতি ধীমাল। এদের কলা, সংস্কৃতি বিশ্বজুড়ে বাঁচিয়ে রাখতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দরবারে লড়াই করে যাচ্ছেন অবসারপ্রাপ্ত শিক্ষক গর্জনবাবু।এখনও পর্যন্ত ১৯৮০ সাল থেকে ধীমালদের জাতিগত পরিচয় দেওয়ার সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন তিনি। ২০০৫ সালে দাওয়া নারবুলা দার্জিলিংয়ের সাংসদ থাকাকালীন দিল্লির দরবারে ধীমালরা প্রথম পা দেন। ২০১৪ সালে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া জেলা থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তাঁকে ধরেও অনেকবার ধীমালদের জন্য দিল্লিতে দরবার করেছেন। বর্তমান এমপি রাজু বিস্তার মাধ্যমেও দাবিদাওয়া দিল্লিতে রেখেছেন। উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডার সঙ্গে দেখা করেছেন। ফের মিলেছে আশ্বাস। তবে কাজের কিছু হয়নি। গত পাঁচ বছরে বহুবার দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে নিজেদের দাবিদাওয়া রাখলেও এবারেও কাজ হয়নি। তাই অনেকটা ক্ষোভ বাড়ছে ধীমালদের মধ্যে। যদিও সাংসদের দাবি ধীমাল সহ ১১টি জনজাতির স্বীকৃতির জন্য এলাধিকবার লোকসভায় সওয়াল করেছেন। খুব শীঘ্রই ওই জনজাতিদের দাবি পূরণ হবে।

Advertisement

রাজু বিস্তা বলেন, “আমি গত পাঁচ বছরে ধীমাল সহ মোট ১১টি জনজাতির স্বীকৃতির জন্য কাজ করেছি। তাদের দাবি পূরণ হবে।” গর্জনবাবু বলেন, “আমাদের সম্প্রদায়কে জনজাতি স্বীকৃতি দেওয়ার লড়াই করেই চলেছি। দিল্লি থেকে শুরু করে একাধিক দরবারে দাবি নিয়ে গিয়েছি। আশ্বাস মিলেছে অনেক। দাবি পূরণ হয়নি।” তিনি আরও জানান, ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধীমালদের দাবি পূরণের জন্য কেন্দ্র সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। এমনকি রাজ্য সরকার আমাদের কমিউনিটি হল ও মিউজিয়াম ভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে এখন ডাক পান ধীমালরা। তবে, ১১টি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীগুলির মাঝে এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য জনজাতির নৃত্য, গান বাজনা টিভি, রেডিওতে প্রচারের সুবিধা রয়েছে। তবে ধীমালদের তা নেই। শিল্পীভাতাও পাচ্ছে না এরা। এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ধীমালদের। একইসঙ্গে ধীমাল ভাষায় গান, কবিতা সংরক্ষণে আর্থিক সমস্যা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধীমাল জনগোষ্ঠী উপজাতির স্বীকৃতি না মেলায় পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমছে।

[আরও পড়ুন: রেললাইনের ধারে পড়ে প্রাক্তন TMC কাউন্সিলরের তিন টুকরো দেহ, বাড়ছে রহস্য]

অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ায় ধীমাল গোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা ভিনরাজ্যে এখন শ্রমিকের কাজে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে ওই জনগোষ্ঠীর প্রায় দুশো পড়ুয়া প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। প্রায় ২৫ জন পড়ুয়া হাই স্কুলের শিক্ষার্থী। আটজন কলেজে পড়েন। জনগোষ্ঠীর দুজন স্নাতকোত্তর ও ছজন স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেছেন। তবে বারবার আশ্বাস পেয়েও জনজাতি স্বীকৃতি না পেয়ে এই সম্প্রদায় যাতে হারিয়ে না যায় সে চিন্তাই মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গর্জনবাবুর।

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ