Advertisement
Advertisement
Lok Sabha Election 2024

কেউ হারিয়েছেন, কারও আবার অস্বস্তি! হাত ঘড়িতে ‘না’ পুরুলিয়ার ৩ প্রার্থীর

হারিয়ে যাওয়ার বেদনার স্মৃতিতেই নেপাল-অজিত হাতে গলান না ঘড়ি!

Lok Sabha Election 2024: 3 candidates of Purulia does not like to wear wrist watch
Published by: Paramita Paul
  • Posted:April 16, 2024 4:05 pm
  • Updated:April 16, 2024 4:59 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কিসকা ঘড়ি মে কিতনা হ্যায় দম! না, এনাদের হাত ঘড়ি দিয়ে দম বিচার হয় না। হাত ঘড়ি যে পরেন না তিনজনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাত ঘড়ি ফ্যাশনে ঢুকে পড়েছে। হয়েছে ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’-ও, কিন্তু এই ‘স্বাদ’ থেকে তাঁরা অনেক দূরে। বাস্তু মতে, হাতঘড়ি পড়লে সৌভাগ্য নিয়ে আসে জীবনে। এ তত্ত্বকথাও তাঁদের অজানা নয়। কিন্তু তবুও হাত ঘড়ি না-পসন্দ।

পুরুলিয়া কেন্দ্রের তিন প্রার্থী। তৃণমূলের ২ বারের মন্ত্রী, রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো। কংগ্রেস প্রার্থী, ৪ বারের বিধায়ক নেপাল মাহাতো। ঝাড়খন্ড আন্দোলনের ‘কালো পাহাড়ের কালো নেতা’, কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো। হাত ঘড়িকে ঘিরে অতীতের দুঃখের স্মৃতিতে আর হাতে গলাতে সাহস পান না। কেমন সেই স্মৃতি? প্রচারের ফাঁকে নেপাল মাহাতো বলছিলেন, “ছেলেবেলা থেকেই হাতে ঘড়ি পড়ার কোনও অভ্যাস নেই। আসলে দরিদ্র পরিবার থেকে বড় হয়ে উঠেছি তো! ঘড়ি পরার বিলাসিতা ছিল না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও ঘড়ি পড়িনি। রাজনীতিতে আসার সময় আমারই এক ঘনিষ্ঠজন একটি দামি কোম্পানির ঘড়ি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। ওই ঘড়ি ছিল এইচএমটি-র। দাম খুব একটা কম ছিল না। মাত্র ২ দিন ঘড়িটা পরেছিলাম। তার পর যে কোথায় সেই দামি ঘড়ি হারিয়ে গেল আর খুঁজে পায়নি। আর তখন থেকে হাত ঘড়ির সঙ্গে আর সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। বহুজন বহুভাবে এমনকী বাড়িরও সবাই বার বার বলতেন হাতে ঘড়ি পরতে। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে আর হাতঘড়ি হাতে গলায় না।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: গোয়া নির্বাচনে ছিলেন আপের আর্থিক দায়িত্বে, লোকসভা ভোটের আগে ইডির হাতে গ্রেপ্তার সেই চনপ্রীত]

হাতঘড়িকে নিয়ে কংগ্রেস প্রার্থীর মতো বেদনাদায়ক স্মৃতি না থাকলেও শাসকদলের প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো তাঁর নিজের দামি হাত ঘড়ি হাতে দেন না। আসলে সহজ- সরল জীবনে অভ্যস্ত শান্তিরামের কাছে হাত ঘড়ি মানে অস্বস্তি। হাত ভারি হয়ে থাকা। তাই বিয়ের সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া টাইটান ঘড়ি যত্ন করে আজও আলমারিতে তুলে রেখেছেন। শান্তিরামের কথায়, “হাত ঘড়ির মূল কাজ হল সময় দেখা। এখন তো মোবাইলেই ঘড়ি দেখা যায়। ফলে সময় দেখার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া হাতে ঘড়ি পড়লে কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হয়। ভারি লাগে বড্ড। আমি একটু ফ্রি ভাবে থাকতে চাই। তাতেই বেশি আরাম বোধ করি। তাই হাতে দিতে একটুও মন চায় না। বিয়েতে শ্বশুরবাড়ির দেওয়া হাত ঘড়ি কয়েকদিন পড়েছিলাম। তারপর ভালো না লাগায় আলমারিতে যত্ন করে তোলা রয়েছে। “

বাস্তুশাস্ত্র বলছে, ডান বা বাম যে কোন হাতেই ঘড়ি পড়া যেতে পারে। তবে ঘড়ি নাকি ডান হাতে পড়া উচিত, কর্মজীবনে বাধা আসতে পারে এই কারণে স্টাইল বা ফ্যাশনের জন্য খুব বড় ডায়ালের ঘড়ি পড়া উচিত নয়। আবার ছোট ডায়ালের ঘড়ি পড়তেও মানা। সাধারণ মাপের ঘড়ি হাতে শুভ হিসেবে ধরা হয়। তবে গোলাকার বা বর্গাকার হওয়া উচিত। এই হাত ঘড়ির বেল্ট ঢিলেঢালা থাকলে কিছুটা আরামে থাকা যায় বটে। কিন্তু এভাবে ঘড়ি পড়লে একাগ্রতার অভাব নিয়ে আসে। সোনালী ও রুপালি রং-র ঘড়ি সবচেয়ে শুভ মনে করা হয়। তবুও হাত ঘড়ি পছন্দ নয় নেপাল ও শান্তিরামের। কিন্তু প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরামের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতেই বেশ কয়েক বছর ধরে স্মার্টওয়াচ পড়ছেন। শরীরে অক্সিজেন কত রয়েছে তা যেমন তৎক্ষণাৎ জানান দেবে ওই স্মার্ট ওয়াচ। তেমনই কত ক্যালরি বার্ন হল সেটাও যাবে বোঝা। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে স্মার্ট ওয়াচ দেখে রাজ্য জুড়ে বহু শাসক দলের নেতা থেকে জনপ্রতিনিধি তা পড়া শুরু করেন। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেও দেখা যায় স্মার্ট ওয়াচ।

[আরও পড়ুন: বিরোধীদের ভূরি ভূরি অভিযোগের মাঝেই ইডিকে দরাজ সার্টিফিকেট মোদির]

তবুও হাত ঘড়ি হাতে গলাতে চান না নেপাল, শান্তিরাম থেকে কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতোও। তাঁর কথায়, “আমি অতশত জানি না। হাত ঘড়িতে সময় দেখা হয় সেটা জানি। আর এখন মোবাইলে সেই কাজ হয়ে যায় তাই ঘড়ি আর প্রয়োজন হয় না।” তাই মোবাইল হাতে নিয়ে ফি দিন ৫০ মিনিট প্রাতঃভ্রমন করেন। ৪০ মিনিট ধরে চলে যোগাসন। কোন আসন কতক্ষণ করবেন তা বলে দেয় ওই মোবাইল। তাঁর কথায়, “আড়শার এক বন্ধু আমাকে কোহিনুর ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে জলাশয়ে নামার সময় পুকুর পাড়ে রেখেছিলাম ওই দামি ঘড়ি। তার পর হাতে নিতে ভুলে যাই। ওই ঘড়ি হারিয়ে যাওয়ায় খারাপ লেগেছিল। তাই আর হাত ঘড়িতে হাত দিই না।” তাই ঘড়ি যেন তিন প্রার্থীর কাছেই ঘোড়ার ডিম!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement