বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: হাতির পর চিতাবাঘের হামলা ডুয়ার্সে (Dooars)। দিন দুই আগে মালবাজারের মেটেলি ব্লকের পশ্চিম বাতাবাড়ি এলাকায় গোয়ালঘরে ঢুকে বাছুর টেনে নিয়ে যায় শ্বাপদ। এর আগে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত হাতির হামলায় মৃতের সংখ্যা ২। এমনই আতঙ্কের পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গের জঙ্গল এলাকায়। আর তা নিয়ন্ত্রণে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় নজরদারি বাড়াতে বনদপ্তর প্রতিটি রেঞ্জে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। হাতির করিডর এলাকায় শুরু হয়েছে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি। চলছে বনকর্মীদের টহলদারি। উত্তরবঙ্গের তিন কেন্দ্র – আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) প্রথম দফায় ভোট রয়েছে ১৯ এপ্রিল।
বনদপ্তরের উত্তরবঙ্গের বনপাল (বন্যপ্রাণ) এস কে মোলে জানিয়েছেন, “কেন্দ্রীয়ভাবে নয়। জঙ্গল লাগোয়া প্রতিটি গ্রাম, বসতি, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র এলাকায় তীক্ষ্ণ নজরদারির প্রয়োজনে রেঞ্জগুলোতে টিম গঠন করা হয়েছে। অফিসারদের চব্বিশ ঘণ্টা সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, গরুমারা, চাপড়ামারি, বৈকুণ্ঠপুর, জলদাপাড়া, খুট্টিমারি জঙ্গল লাগোয়া প্রতিটি এলাকায় রেঞ্জের টিমগুলো নজরদারি শুরু করেছে। হাতির প্রতিটি করিডরে (Elephant Corridor) বিশেষ নজরদারি চালাতে কর্মীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও সেখানে পেট্রলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন লোকসভা কেন্দ্রে কুমারগ্রাম থেকে বোদাগঞ্জ পর্যন্ত জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় প্রায় চারশো গ্রাম রয়েছে। সেখানেই সমস্যা বেশি। বৃহস্পতিবার রাতে মেটেলি ব্লকের বিধাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম বাতাবাড়ি এলাকায় গোয়াল ঘরে ঢুকে বাছুর টেনে নিয়ে যায় চিতাবাঘ। ঘটনার জেরে এলাকায় আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে। এর আগে ১০ এপ্রিল হাতি ও বাইসনের জোড়া হামলায় ডুয়ার্সের কালচিনি এলাকায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ৬ এপ্রিল মেটেলি ব্লকের ব্লকের উত্তর ধূপঝড়া এলাকায় হাতির হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক মহিলা।
বনদপ্তরের (Forest Department) কর্তারা জানান, সাধারণভাবে এই সময় খাবারের খোঁজে বুনো হাতিদের এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে যাতায়াত বেড়ে যায়। এছাড়াও জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় বাইসন, চিতাবাঘের আনাগোনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভোট থাকায় সতর্ক থাকতে হচ্ছে। কয়েকদিনের সমীক্ষায় তারা দেখেছেন, এই মূহুর্তে হাতি ও চিতাবাঘের উপদ্রব বেশি জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের মেটেলি ব্লকের উত্তর ও দক্ষিণ নেওড়া রেঞ্জের সামসিং, ইনডং, চিলৌনি, জুরন্তী এলাকা। নাগরাকাটার খেরকাটা, বামনডাঙা টন্ডু, ডায়না বস্তি। বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলের রংধামালি, গৌরীকোণ, বোদাগঞ্জ গ্রাম। ময়নাগুড়ি ব্লকের রামশাই, কালামাটি গ্রাম। ধূপগুড়ির খুট্টিমারি, রাভা বস্তি, সোনাখালি, মোরাঘাট বনবস্তিতে। আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) লোকসভা কেন্দ্রের মাদারিহাট ব্লক, ফালাকাটার জটেশ্বর, বীরপাড়া ও কালচিনির বিভিন্ন চা বাগান এলাকাতেও একই সমস্যা রয়েছে। ভুট্টার লোভে বুনো হাতি প্রায়দিন লোকালয়ে ঢুকছে।
বনদপ্তরের উত্তরবঙ্গের বনপাল জানান, জঙ্গল সংলগ্ন যে সমস্ত এলাকায় ভোটের প্রচার চলছে সেখানে বেশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত সেটা অব্যাহত থাকবে। জঙ্গল সংলগ্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে দিনরাত পেট্রলিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণের দিন বনকর্মী এবং বনকর্তারা বিশেষভাবে সেখানে নজরদারি চালাবেন। কোথাও বন্যপ্রাণের দেখা মিলেছে, এই খবর পাওয়ামাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.