সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: স্নাতক হওয়ার পরেই ঘর ছেড়ে ছিল মেয়েটা। তার পর পার্টি সেন্টারেই চার হাত এক হয়ে ‘কমরেড ম্যারেজ’। সেখানেই ফুটফুটে সন্তান। তবুও আর ঘরে ফিরে যাওয়া হয়নি। পার্টির টানে পার্টি সেন্টারই ঘর-সংসার থেকে মানুষের সেবা করার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আর তাই পার্টির দেওয়া স্কুটি ও পরিচিতজনদের সাহায্য করা অ্যাকাউন্টে থাকা ২২ হাজার টাকায় ভোটের ময়দানে।
সুস্মিতা মাহাতো। পুরুলিয়া কেন্দ্রের এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) প্রার্থী। বয়স ৪৪। দলের প্রমীলা ব্রিগেডের ইয়ং মুখ। জেলা কমিটির সদস্য। ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা জঙ্গলমহলের এই জেলায় ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও গড়ে তোলার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন সুস্মিতা। ছাত্র আন্দোলনের পর্ব শেষ করে এখন মহিলাদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে শামিল। নারী নির্যাতন, বধূ হত্যা, ডাইনি প্রথা, ধর্ষণের বিরুদ্ধে মহিলা আন্দোলনকে জেলায় শক্তিশালী করেছেন তিনি।
সেই সঙ্গে মদবিরোধী আন্দোলনেও সুস্মিতা একটি নাম। এছাড়া সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত অসহায় ধাত্রী মায়েদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন তাদের দাবি আদায়ের নিজস্ব সংগঠন। নিজেকে যুক্ত করেছেন শ্রমিক আন্দোলনেও। মিড ডে মিল, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ওপর সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে গলা ফাটান তিনি। এভাবেই মেহনতি মানুষের নেত্রী হয়ে উঠেছেন কমরেড সুস্মিতা। দলের আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক জীবনকেই আপন করে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু এমন নাই বা হতে পারতো। আর পাঁচটা মেয়ের মতোই অন্যরকম হতে পারতো জীবন। কিন্তু না। পুরুলিয়ার জগন্নাথ কিশোর মহাবিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক সুস্মিতা স্বচ্ছল উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের তথাকথিত স্বাচ্ছন্দ্য, উচ্চশিক্ষা ও নিরাপদ কেরিয়ারের হাতছানিকে উপেক্ষা করে দলের সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে নিজেকে তৈরি করেন। সেই কারণেই ২০০২ সালে ঘর ছেড়ে শহর পুরুলিয়ার নিউ ফেমিন রোডে পার্টি সেন্টারে জীবন কাটান। তাঁর স্বামী সৌরভ ঘোষও এই পার্টির কমরেড। স্বামী ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া ছেলেকে নিয়ে এই পার্টি সেন্টার তাঁর এখন ‘প্রথম ঘর’! তাহলে কি পরিবারের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই আর? সুস্মিতা বলেন, “তা কেন থাকবে না? সব যোগাযোগই রয়েছে। শুধু ঘরে আর ফেরা হয় না।” আসলে সংসারের মায়ায় জড়াতে চান না সুস্মিতা। তাই বিয়ে করলেও না আছে সিঁথিতে সিঁদুর, হাতে শাঁখা-পলা। নিজের নামের সঙ্গে স্বামীর পদবি জুড়ে দেননি। বাবার পদবিকেই রেখেছেন।
কেমন এই পার্টি সেন্টার? সুস্মিতা বলেন, “আর পাঁচটা বাড়ির মতোই। কিন্তু এখানে সংসারের কোন মায়া নেই। সংসারের দায়-দায়িত্ব নেই। বরং একটা নিয়ম শৃঙ্খলায় বাঁধা। আমরা রুটিন করে এই সেন্টারের সমস্ত কাজ করি। রান্নাবান্না থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তবে এই সর্বক্ষণের কর্মীর জন্য আমরা পার্টির কাছ থেকে কোন টাকা নিই না। পার্টিকে সাহায্য করাই আমাদের কাজ। তাই জীবনের লড়াই, আনন্দ পার্টিকে ঘিরেই।” আর পার্টির আন্দোলন করতে গিয়ে ২০১০ এবং ২০২০তে জেলও খাটতে হয়েছে সুস্মিতাকে। ভোট প্রচারের ইস্যু কি? কি বা বলছেন? সুস্মিতা বলেন, “পুরুলিয়ায় খরা সমস্যার স্থায়ী সমাধান, অনাবাদি কৃষি জমিতে শ্রম নিবিড় শিল্প, জেলার সমস্ত বন ও জঙ্গলকে রক্ষা করা। গ্রামে গ্রামে মদ ভাটি বন্ধ করা।” সকাল থেকে রাত সমাজের নতুন চেহারা দিতে লড়ছেন সুস্মিতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.