সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বাবা ও এক শিষ্যর গাইডলাইন মেনে চলেন। সেই গাইডলাইন মেনে পাঁজি দেখে মাহেন্দ্রক্ষণে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীমকুমার সরকার। বৃহস্পতিবার বর্ধমানে বিশাল শোভাযাত্রা নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ)-এর দপ্তরে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন হরিণঘাটার বিধায়ক কবিয়াল অসীম। আর এই শোভাযাত্রায় ঠাকুরনগর থেকে চাকদহ, হরিণঘাটা থেকে হুগলি সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ভিড় করেছিলেন। বেশ কয়েকজন কচিকাঁচাকেও ভিড়ে দেখা গিয়েছে। যদিও বিজেপি প্রার্থী দাবি করেছেন, বাইরে থেকে কেউ এসে থাকলে তাঁরা ভালবেসে এসেছিলেন। তবে ভিড় করেছিলেন নির্বাচনী ক্ষেত্রেরই লোকজন।
এদিন মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে এসে বিজেপি প্রার্থী বলেন, “এবার লড়াইটা তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে। মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। স্ট্রিট কর্নার বা পথসভা করছি সেটা জনসভার চেহারা নিচ্ছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল এবার হারছেই।” আরপাঁজি দেখে মাহেন্দ্রক্ষণে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, এদিন দশমী তিথি ছিল। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের পর মাহেন্দ্রযোগ ছিল। তিনি জানান, তাঁর বাবা স্বর্গীয় রাজবল্লভ সরকার পাঁজি দেখে, তিথি মেনে, মাহেন্দ্র যোগে কোনও কাজ করলে সফলতা আসে বলে শিখিয়েছিনে। তাঁর এক শিষ্য রয়েছেন শ্যাম নামে। রায়গঞ্জের বাসিন্দা। জ্যোতিষবিদ্যায় সোনার মুকুট পেয়েছেন। অসীম বলেন, “আমার বাবার গাইডলাইন ও ওই শিষ্যর গাইডলাইন মিলে গিয়েছিল। এদিন ১০ টা ১৫ মিনিটের পর মাহেন্দ্র যোগ ছিল। সেই মতো সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে মাহেন্দ্রক্ষণে মনোনয়ন জমা দিতে রওয়ানা হয়েছিলাম।”
এদিন বর্ধমানের বীরহাটা মোড় থেকে শোভাযাত্রা করে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন। ঢাক-ঢোল বাদকদের দল ছিল। ব্যাঞ্জোর দল। শিঙা ফুঁকছিলেন বেশ কয়েকজন। মতুয়াদের একটি বাজনদার দল ছিল। বেশ কয়েকজন সাধুসন্ন্যাসীও ছিলেন বিজেপি প্রার্থীর শোভাযাত্রায়। হুগলির বলাগড়ের জিরাট থেকে এসেছিলেন যমুনা সমাদ্দার। তিনি দলের তরফে দায়িত্ব পেয়ে এসেছেন বলে দাবি করেন। শ্রীখোল বাদক জগন্নাথ হালদার, রাজু হালদাররা এসেছিলেন ডানকুনি থেকে। শিঙা বাদক-সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ২২ জনের একটি দল এদিনের শোভাযাত্রায় এসছিল উত্তর ২৪ পরগনার চাপরা ঠাকুরনগর থেকে। তাঁদের একজন নীলরতন গোঁসাই। হুগলি থেকে শ্রীখোল বাদক হরেকৃষ্ণ হালদার, মহেশ্বর হালদাররা। উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুর থেকে এসেছিলেন বিজেপি কর্মী তথা শিঙাবাদক নীলকমল সাহা। ঠাকুরনগর থেকে এসেছিলেন স্বামীজি গোপাল। তিনি বলেন, “আমরা অসীম সরকারের কাছের লোক। এমনকি বোলপুর ও বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র এলাকা থেকেও অনেককে এদিনে শোভাযাত্রায় আনা হয়েছিল।
বোলপুর লোকসভার আউশগ্রামে ছোরা ডাঙাপাড়া এলাকার সুখী দাস জানান, বাজনা বাজাতে আনা হয়েছিল। এদিনের শোভাযাত্রায় অনেককেই না কি রাম নবমীর শোভাযাত্রার কথা বলে আনা হয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে। মূলত বহিরাগতদের নিয়ে শোভাযাত্রার ‘জৌলুষ’ বাড়াতে হয়েছে বিজেপিকে। যা নিয়ে বিজেপি প্রার্থী অসীমকুমার সরকারের সাফাই, “সবই আমার নির্বাচনী কেন্দ্রের লোকজনই ছিলেন। শুধুমাত্র সন্ন্যাসীর একটি জল এসেছিল। যাঁরা আমার সব কর্মসূচিতেই থাকেন। এর বাইরে কেউ এসে থাকলে তিনি আমার প্রতি ভালবাসা থেকে এসেছেন।”
যদিও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “উনি নির্বাচনে লড়তে এসেছেন নদিয়া জেলা থেকে। উনি এখানে লোক পাননি। প্রচারেও লোক পাচ্ছেন না। মনোনয়ন জমা দিতে এসে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি থেকে লোক নিয়ে এসেছেন এর মধ্যে আর অপরাধ কি! সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোক জড়ো করতে পারে। আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের প্রার্থী শর্মিলা সরকার ওই লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের নিয়েই মনোনয়ন দাখিল করবেন।” অসীম সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, “কারা দুর্নীতির জাদুগর সবাই জানে। সব দুর্নীতিগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বিজেপি। যে যত বড় দুর্নীতিবাজ তাকে যখন কেউ ধরতে যাচ্ছে সে নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে বিজেপিতে। দুইদিন আগে উনিই বলেছেন দুর্নীতিগ্রস্তরা বিজেপিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির স্পর্শে পরিশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের আর নতুন করে কিছু বলতে হবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.