পাণ্ডুয়ায় নিহত কিশোরের মায়ের সঙ্গে লকেট চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
সুমন করাতি, হুগলি: ছেলে বাপের বাড়িতে। সকাল সকাল দ্রুত বাড়ির কাজ সারছিলেন। আচমকাই বাপের বাড়ি থেকে ফোন। ওপ্রান্তে তখন মহিলার দাদার কান্নাভেজা গলা। বলছেন, “যত তাড়াতাড়ি পারিস চলে আয়।” তড়িঘড়ি বর্ধমান থেকে পাণ্ডুয়ার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। আসার পথে বার বার মনে হয়েছিল ছেলেটা ঠিক আছে তো? বাপের বাড়ির কাছে আসতেই মিলল দুঃসংবাদ। সদ্য সন্তানকে হারিয়ে শোকে আকূল মা। হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে জড়িয়ে বুকফাটা কান্না। মুখে শুধু একটাই কথা, “বাবা তুই কোথায়? মানতে পারছি না।” যে বা যারা বোমা মজুত করে রেখেছিল, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন মৃত কিশোরের মা।
বছর দশেকের রাজ বিশ্বাস, বর্ধমানের বাসিন্দা। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি পড়ে গিয়েছে। তাই রাজ গত ৯ দিন ধরে পাণ্ডুয়ার তিন্না নেতাজি কলোনিতে মামার বাড়িতেই ছিল। গত পরশু মায়ের সঙ্গে শেষবার ভিডিও কলে কথা হয় তার। “ভালো আছে”, বলেই মাকে জানিয়েছিল রাজ। মামার বাড়ির আশেপাশের কিশোরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলেছিল। সোমবার সকালে তাদের সঙ্গে মামার বাড়ির কাছে পুকুরের পাড়ে খেলা করছিল। বল ভেবে বোমা কুড়িয়ে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। কিছু বোঝার আগে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় শরীর।
শব্দ পেয়ে তখন এলাকার প্রায় প্রত্যেক বাড়ির সদস্যরাই পুকুরপাড়ে জড়ো হন। প্রাণহীন দেহ উদ্ধার করা হয়। নিয়ে যাওয়া পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানান, পথেই প্রাণ হারিয়েছে সে। রাজের আরও দুই বন্ধু সৌরভ চৌধুরী এবং রূপম বল্লব চুঁচু়ড়ার ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তারা। স্থানীয় সূত্রে খবর, জখম দুই কিশোরের মধ্যে একজনের হাত উড়ে গিয়েছে।
এদিকে, এই ঘটনার পরই ওই মৃত কিশোরের মামার বাড়িতে যান বিদায়ী সাংসদ তথা হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। মৃতের মা এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ বচসাতেও জড়িয়ে পড়েন। “এক মায়ের বুকফাটা কান্না শুনেও কেন চুপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?”, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। এই ঘটনায় NIA তদন্তের দাবিতে সরব লকেট। কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে দোষীদের গ্রেপ্তারির দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ অবস্থানে শামিল হন বিজেপি প্রার্থী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.