নিজস্ব চিত্র।
সুমন করাতি, হুগলি: রুপোলি পর্দার তাঁরা দীর্ঘদিনের বন্ধু। রাজনীতির ময়দানে অবশ্য সিনিয়র-জুনিয়র লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee) এবং রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (Rachna Banerjee)। দু’জনই আবার প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের জার্সিতে হুগলি থেকে লড়াইয়ের ময়দানে। কিন্তু, বাস্তবের রুক্ষ ময়দানে ‘বন্ধুকে’ রাজনৈতিক কটাক্ষের শিকার হতে দেখে একটু যেন ‘মনকেমন’ হুগলির বিজেপি প্রার্থীর। নববর্ষের দিনে তা বলেও দিলেন মুখ ফুটে। লড়াই যেমনই হোক না কেন, বন্ধু যে বন্ধুই হয়, হয়তো তা বুঝিয়েও দিলেন হাবেভাবে পদ্মপ্রার্থী লকেট। সাফ জানালেন, “রচনা আমার বন্ধু। ওঁকে নিয়ে মিম হতে দেখে খারাপ লাগে। বিষয়টাকে হালকাভাবে নেওয়াই ভালো। কোনও মহিলাকে নিয়ে মিম হলে আমার ভালো লাগে না।”
লকেট চট্টোপাধ্যায় আজ দশ বছর ধরে বিজেপির হয়ে বঙ্গ রাজনীতির ময়দান কামড়ে পড়ে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধেই তৃণমূল প্রার্থী করেছে রচনাকে। সম্প্রতি রচনার কিছু মন্তব্যে সক্রিয় হয়েছে ট্রোল বাহিনী। এবার ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু রচনার পক্ষে আওয়াজ তুললেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা বহু ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন। এবার ভোটে ‘প্রতিপক্ষ’ রচনাকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করলেন লকেট। পাশাপাশি এই ধরনের মিম কোনওভাবেই উচিত নয় বলে মন্তব্য লকেটের। একইসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসাও শোনা যায় লকেটের মুখে। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি লড়াইটা করেছিলেন। বাকি যাঁরা এসেছেন সব ওঁর নাম করে। লড়াইটা কেউ করেননি। ওঁকে আমি ফেভারিট বলব না। আমি একজন মহিলা তাই জানি লড়াইটা। তবে তিনি যা ভেবে লড়াই করেছিলেন পরে ওঁর লাইনটাই ঘুরে গিয়েছে। প্রাধান্য বদলে গিয়েছে। মহিলাদের প্রাধান্য দিতে এসেছিলেন কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হয়েছেন মহিলারা।”
সম্প্রতি রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলিতে ‘ধোঁয়া’ এবং হুগলির ‘দই’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, যা নিয়ে মিম তৈরি করেছিলেন অনেকে। কখনও তাঁর শিল্প হয়েছে বোঝাতে গিয়ে ‘ধোঁয়াই ধোঁয়া’ বলা হোক বা সিঙ্গুরের ঘাস খাওয়া গোরুর দুধে তৈরি দই ভালো বলা হোক, প্রচারে বেরিয়ে গরম ঘুগনি খেয়ে তাঁর তারিফ- এই নিয়ে মিম হয়েছে। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই মিমগুলি নিয়ে তিনি খুব একটা চিন্তিত নন। তাতে বিশেষ আমল দেন না তিনি। এই প্রসঙ্গে রচনার পাশে দেখা গেল লকেটকে। তিনি বলেন, “কোনও মহিলাকে নিয়ে মিম হলে ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লাগে না। ও আমার বন্ধু। তাই খারাপ লাগে। তবে এই সব হালকাভাবে নেওয়াই ভালো।” অন্যদিকে, ধামসা মাদলের তালে মহিলাদের সঙ্গে নাচের মধ্য দিয়ে কাটল তৃণমূল প্রার্থী রচনার পয়লা বৈশাখ। রবিবার হুডখোলা গাড়িতে চেপে বাংলার জনতাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান রচনা। সঙ্গে ছিলেন ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র। এদিন মহিষগড়িয়া তেমাথা থেকে প্রচার শুরু করেন তিনি। প্রার্থীকে দেখতে গ্রামের রাস্তায় প্রচুর মহিলা অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁরা ফুল ছুড়ে অভিনন্দন জানান প্রার্থীকে। প্রার্থীও জনতার উদ্দেশে ফুল ছুড়ে দেন।
রচনা বলেন, “আজ পয়লা বৈশাখের দিনে হুগলির মানুষের কাছে আসতে পেরেছি, এতে খুব ভালো লাগছে।” বলাগড়ে নৌ-শিল্প নিয়ে লকেটকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “উনি পাঁচ বছরে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগেও উনি বলেছেন। দেখা যাক উনি কী করতে পারেন।” মোদির মহিলা ব্রিগেড নিয়ে রচনা বলেন, “দিদি তো অনেক আগেই করে দিয়েছেন। এখন দিদিকে কপি করছেন।” শেষবেলার প্রচারশেষে রচনা ধনেখালি বিধানসভার কানানদী এলাকায় নববর্ষ উপলক্ষে সকলকে নিজে হাতে চা ও লাড্ডু বিতরণ করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.