Advertisement
Advertisement

Breaking News

purulia

আজও বিচ্ছিন্ন পুরুলিয়ার ২ হাজার ফুট উঁচু বড়গোড়া! উপেক্ষার কথা শুনলেন পুলিশ সুপার

উন্নয়ন পৌঁছে দিতে রাস্তার আশ্বাস পুলিশ সুপারের।

Locals of Bargora complains to SP on lack of roads

বাঘমুন্ডির পাহাড়ি গ্রাম বড়গোড়ার মানুষজনদের সঙ্গে কথা বলছেন পুরুলিয়ার এসপি। বুধবার। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

Published by: Paramita Paul
  • Posted:December 11, 2024 9:26 pm
  • Updated:December 11, 2024 9:26 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রায় ২ হাজার ফুট উঁচু। সেই পাহাড় চূড়ার গ্রাম আজও বিচ্ছিন্ন। নেই রাস্তা। নেই পানীয় জল। এখনও ওই গাঁয়ের সকল মহিলা রাজের মেগা প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আওতায় আসেননি। তাই পাহাড়িয়া জনজাতির গ্রামকে সামগ্রিক উন্নয়নের কাজে যুক্ত করতে বুধবার পাহাড়ি পথে মোটরবাইকেই ওই গ্রামে পা রাখেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। চড়াই-উতরাই পথ, পাহাড়ি ঝরনা পেরিয়ে শোনেন ওই জনজাতির মানুষজনদের মনের কথা। কীভাবে কাটে তাদের দিন রাত! আর ওই দাবি-দাওয়া শুনে তার যাতে দ্রুত সমাধান হয় সেই বিষয়ে ওই গ্রামে দাঁড়িয়েই প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি।

চারপাশ সবুজ পাহাড়ে ঘেরা। সেই পাহাড়-টিলাতেই ১৯টি পাহাড়িয়া জনজাতির বাস। তারা মূলত জঙ্গলের বনজ সম্পদ বিক্রি করেই দিন গুজরান করেন। আর রাজ্যের সুবিধা বলতে রেশনের চাল। সেই গণবণ্টনের চালে পেট ভরতি খাবার হয়তো মেলে। আগেকার মত খিদে পেটে থাকতে হয় না। কিন্তু পানীয় জলের কোনও বন্দোবস্তই নেই। গ্রাম থেকে প্রায় ১ কিমি দূরে শুকিয়ে যাওয়া জোড়ের পাশে ‘দাঁড়ি’ (গর্ত খুঁড়ে) থেকে কিংবা কুমারী নদীর জল-ই ভরসা। তবে গ্রীষ্মে শুকিয়ে প্রায় খটখটে হয়ে যায় সব। তখন রীতিমতো হাহাকার পড়ে পানীয় জলের। আর রাস্তা না থাকায় বর্ষায় কার্যত থমকে যায় জনজীবন-ই। ঢোকে না চার চাকার গাড়ি। তাই সামগ্রিক উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে যাতে সম্পূর্ণভাবে উন্নয়নের আলো পৌঁছে দেওয়া যায় সেই কারণেই এদিন পাহাড়চূড়ার গ্রামে পা রাখেন এসপি।

Advertisement
বাঘমুন্ডির পাহাড়ি গ্রাম বড়গোড়ার মানুষজনদের সঙ্গে কথা বলছেন পুরুলিয়ার এসপি। বুধবার। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

পুলিশ সুপারকে কাছে পেয়ে গ্রামের মানুষজন মোট চারটি রাস্তার প্রস্তাব রাখেন তারা। বড়গোড়া থেকে আমকোচা। আমকোচা থেকে ছাতরাজেরা। আমকোচা থেকে তিলাগোড়া। তিলাগোড়া থেকে খুনটাড়। এই চারটি রাস্তার জন্য ওই এলাকার মানুষজনের গণস্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন পত্র বাঘমুন্ডি ও বলরামপুর প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেবে পুলিশ। সেই কথা জানিয়েও দেন পুলিশ সুপার। সেই সঙ্গে গ্রামের যে সকল মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে যাতে ওই প্রকল্পের আওতায় আনা যায়। তাই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের তরফে একটি শিবির করে সেই ফর্ম পূরণ করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে সেই বিষয়টিও সুনিশ্চিত করেন তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, “বড়গোড়া মানুষজনের কিছু সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে একটা বড় বিষয় রাস্তা। ওই সমস্যাগুলো যাতে দ্রুত সমাধান করা যায় তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”

পাহাড় চূড়ার এই গ্রামে এই প্রথম কোন পুলিশ সুপার পা রাখলেন। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে কোভিডের সময় এই গ্রামে এসেছেন পুরুলিয়ার তৎকালীন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘আস্থা’ প্রকল্পে খাটিয়া বৈঠকে ওই এলাকার মানুষজন বলরামপুরের খুনটাড় থেকে হেদেলবেড়ার বেহাল রাস্তার সংস্কারের দাবি করেছিলেন। সেই দাবি মেনে পুলিশ সুপার পথ নিরাপত্তা কমিটির কাছে তা তুলে ধরেছিলেন। তারপরেই ওই রাস্তার সংস্কারের কাজে হাত দেয় পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। দরপত্র আহবানের মধ্য দিয়ে খুব শীঘ্রই সেই কাজ হবে। এদিন সেই রাস্তাও পরিদর্শন করেন তিনি।

বাঘমুন্ডির পাহাড়ি গ্রাম বড়গোড়ার মানুষজনদের সঙ্গে কথা বলছেন পুরুলিয়ার এসপি। বুধবার। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

এই গ্রাম থেকে গত পঞ্চায়েত ভোটে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হওয়া সুমিত্রা পাহাড়িয়া বলেন, “গ্রামের একটা রাস্তার জন্য কতবার যে বাঘমুন্ডি ব্লকে গিয়েছি তার হিসাব নেই। গ্রামে ঢোকার কিছুটা রাস্তা ঢালাই হয়েছিল। কিন্তু চলতি বর্ষায় ধুয়ে মুছে যায়। এতটাই খারাপ কাজ হয়। বাকি পাহাড়ি পথ কাঁচায় পড়ে রয়েছে। আমরা চাইছি আমাদের গ্রাম যাতে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে না থাকে। বড়গোড়া যাতে বাঘমুন্ডি, বলরামপুরের সঙ্গে রাস্তার মাধ্যমে যুক্ত হয়। শুধুমাত্র রাস্তা না থাকার জন্য উন্নয়ন থমকে গিয়েছে আমাদের গ্রামে। পানীয় জলেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। এই সমস্যাগুলোর কথাই আমরা এসপি কে বললাম।” তারপরেই ক্ষুব্ধ হয়ে যান সুমিত্রা। “এরপরেও যদি কোন কিছু না হয় তাহলে বড়গোড়া বিচ্ছিন্ন-ই থাকুক। উন্নয়নের বাইরে থাকুক এই গ্রাম।” তবে এদিন যেভাবে পুলিশ সুপার মোটর বাইকে চেপে আধিকারিকদেরকে নিয়ে এই গ্রামে পা রাখেন তাতে নতুন করে রাস্তার স্বপ্ন দেখছেন এই পাহাড়ি গ্রামের মানুষজন। নাগর ও হারাধন পাহাড়িয়া বলেন, “শুধু রাস্তা নয়। পানীয় জলের ও ব্যবস্থা করতে হবে। আর কতদিন আমরা ‘দাঁড়ি’-র জল খেয়ে দিন গুজরান করব।”

রাস্তা না থাকায় অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে ডুলিতে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। বড়গোড়ার এই করুণ ছবিও পুলিশ সুপারের কাছে এদিন তুলে ধরেন সুমিত্রা। এই বড়গোড়া-আমকোচা থেকেই ২০১০ সালের অক্টোবরে কোজাগরি পূর্ণিমার সময় মাওবাদীদের হাতে অপহৃত হন রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে আসা আই বি ইন্সপেক্টর পার্থ বিশ্বাস। সেই সঙ্গে তার সঙ্গী শিক্ষক সৌমজিৎ বসু। তারপর তাদের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হয় বড়গোড়া থেকে কিছুটা দূরে বাঘমুন্ডির ছাতরাজেরা গ্রামের পড়াশিবন জঙ্গল থেকে। এদিন ঘুরে ফিরে আসে সেই কথাও। কারণ এই পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানেই ওই ঘটনার কিনারা হয়েছিল। তখন অবশ্য তিনি ছিলেন এই জেলার ডিএসপি (শৃঙ্খলা প্রশিক্ষণ )। এই গ্রাম যে ছিল মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল! নাগর পাহাড়িয়ার কথায়, “তখন প্রতিদিন মাওবাদীরা গ্রামে আসত। মিটিং করত। আমাকেও মাওবাদী সন্দেহে জেলে থাকতে হয়। এখন অবশ্য সে সবকিছু নেই। রাস্তা আর পানীয় জলটুকুর ব্যবস্থা করে দিলেই হবে।” নাগরের কাঁধে হাত রেখে ভরসা দেন এসপি। এদিন পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে ছিলেন একদা মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াডের সদস্য নন্দ কুমার, তরণী টুডু, পার্বতী টুডু, জলধর সিং সর্দারের মতো রাজ্য পুলিশের স্পেশাল হোমগার্ডরাও। যাতে জনসংযোগ আরও নিবিড় হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement