বাসিন্দাদের জমিতেই তৈরি হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র।
চন্দ্রজিৎ মজুমদার, কান্দি: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য জমি দানে এগিয়ে এলেন ভরতপুরের বাসিন্দারা। পিছিয়ে পড়া জেলা মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকা ভরত এক নম্বর ব্লক। এই ব্লকের অধীনে সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ২৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রেরই স্থায়ী ঘর নেই। এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির বারান্দা বা অব্যবহৃত ঘরেই শিশুদের ক্লাস নেওয়া হয়। এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির জন্য জমি দান করে মানবিকতার নজির গড়লেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই জমি দাতাদের তালিকায় যেমন সম্পন্ন গৃহস্থ আছেন তেমনই রয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জমি পেয়ে আপ্পুত ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা।
মুর্শিদাবাদের ভরতপুর এক নম্বরের বিডিও অঞ্জন চৌধুরি বলেন, এই ব্লকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থাকলেও সেগুলির স্থায়ী ঠিকানা নেই। কিন্তু অস্থায়ী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে আশপাশেই রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরেই ব্লক প্রশাসনের তরফে বাসিন্দাদের কাছে জমি দান করার আবেদন রাখা হয়েছিল। সাড়াও মিলেছে। স্থানীয় বিনোদিয়া গ্রামের বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত ডিএসপি চৌধুরি রেজা সাহেব ইতিমধ্যেই ১০ কাঠা জমি দান করেছেন। তিনি এখানকার বাসিন্দা হলেও এখন কলকাতাতেই থাকেন। চৌধুরী সাহেবের দেখাদেখি স্থানীয় তালগ্রাম পঞ্চায়েতের দেচাপড়া গ্রামের এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য আদুরি বিবিও জমি দান করেছেন।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য জমিদাতা ডিএসপি চৌধুরি রেজা সাহেব বলেন, “মানুষ তার নিজের কর্তব্য পালন করতে ভুলে গিয়েছে। তবে আমার কাছে যখন জমি দানের প্রস্তাব এল তখন না করিনি। আমি চাই এলাকার বাসিন্দাদের উন্নয়ন হোক। এখানে কোনও কমিউনিটি হল, কলেজ কিছুই নেই। আমরা চাই সরকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দান করা জমিতে এসব তৈরি করুক। আমার সঙ্গে ইতিমধ্যেই ১০ কাঠা জমি দেওয়ার কথা হয়ে গিয়েছে। জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।” অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য জমি দান করতে পেরে খুশি আদুরিবিবি। তিনি জানিয়েছেন, শিশুরা অন্যের বাড়ির বারান্দায় ক্লাস করে। দিদিমণিদের খুব অসুবিধা হয়। এই বাচ্চাদের জন্য স্থায়ী বাড়ি হলে ভালই হবে। সামনে শীত আসছে, তখন আর অস্থায়ী ঠিকানায় গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হবে না। শিশুরা স্বস্তিতেই খেলাধুলা করতে পারবে।
গত নভেম্বরে বহরমপুরের রবীন্দ্রভবনে প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার বিডিওদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, এলাকার প্রতিটি অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের পাকা ঘর তৈরি করে দিতে হবে। সেই মতো সরকার থেকে নিজস্ব ফান্ডের ব্যবস্থাও করা হয়। মূলত এমএসডিপি, বিসিডাব্লিউ, এমজিএনআরআইজিএস থেকে পর্যাপ্ত টাকাও বিডিওদের দেওয়া হয়। সেই টাকা ব্লকে আসার পরেই আইসিডিএসে ঘর নির্মাণে গতি পায়। সরকারি জমিতে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অনেক জায়গাতেই সরকারের জমি না থাকায় সাধারণ মানুষের কাছেই জমির আবেদন করা হয়। এরপর সেই কাজ শুরু হতেই ফের গতি পেয়েছে নির্মাণ কাজ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.