দেবাদৃতা মণ্ডল, চুঁচুড়া: দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াইয়ে উত্তেজনা ছড়াল। শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়া থানার রবীন্দ্রনগর এলাকায়। দু’পক্ষের গুলির লড়াইতে রাতভর ওই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন রাতে রবীন্দ্রনগর এলাকায় পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। সেই সময়ে দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। পালটা পুলিশও গুলি চালায়।
[ আরও পড়ুন: সম্পর্কে টানাপোড়েনের জের, প্রেমিকাকে খুনের পর আত্মহত্যার চেষ্টা যুবকের ]
এই ঘটনায় শনিবার এলাকার দুষ্কৃতীরা রবীন্দ্রনগর, চুঁচুড়া স্টেশন, হুগলি স্টেশন ও স্থানীয় বাজার এলাকায় বন্ধ ডাকে। একই সঙ্গে তারা রবীন্দ্রনগর মাঠে স্থানীয় বাসিন্দাদের ডেকে জানায়, পুলিশ নিরীহ মানুষের উপর গুলি চালিয়েছে। তাই অবরোধ, বিক্ষোভে নেমে প্রতিরোধ করা দরকার।
রবীন্দ্রনগর এলাকা-সহ একাধিক জায়গায় মিছিল, টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ শুরু হয়। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় চুঁচুড়া থানার পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ। অভিযোগ, এরপর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ করে তুলে দেয়। পুলিশ অবশ্য গুলি চালানোর ও লাঠিচার্জের কথা অস্বীকার করেছে। এলাকা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয়দের একটি অংশের অভিযোগ, সাধারণ মানুষকে মারধর করা হয়েছে। প্রথমে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, এলাকার মহিলাদের সামনে এগিয়ে দিয়ে পিছন থেকে গুলি চালিয়েছে সমাজবিরোধীরা।
শুক্রবার গভীর রাতের এই ঘটনার জেরে চুঁচুড়া ও হুগলির বিভিন্ন এলাকা শুনশান। বাজার এবং মাছের আড়ত বন্ধ। পুলিশি সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সকালে বিরাট মিছিল করেন রবীন্দ্রনগরের সাধারণ মানুষ। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে চলছে বন্ধ। সমাজবিরোধীদের ধরতে চন্দননগর কমিশনারেটের বিরাট পুলিশ বাহিনী অভিযান চালিয়েছিল। রবীন্দ্রনগরে কয়েকজনকে ধরার পর এলাকার মানুষ পুলিশের হাত থেকে তাদের ছিনিয়ে নিতে টানাহেঁচড়া করে বলে অভিযোগ। রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন এলাকার মহিলারা। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এদিন দুপুরে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ফের অভিযান হয়। অশান্তি পাকানোর অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটানো হয়।
[ আরও পড়ুন: ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের লাঠিচার্জ-কাঁদানে গ্যাস ]
শনিবার সকাল থেকে বন্ধের চেহারা নেয় হুগলি জেলা সদরের কোদালিয়া এক ও দু’নম্বর পঞ্চায়েত এলাকা। স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এলাকার মানুষ আতঙ্কিত। অফিসযাত্রীরা স্টেশনের দিকে আসতে পারছেন না। এই ঘটনায় জেলা সদরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল। মাস দেড়েক আগে একটি ক্লাবের মধ্যে গুলিতে খুন হয়েছিল এক সমাজ বিরোধী। তারপর চলতি মাসে ব্যান্ডেলে খুন হন স্থানীয় তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম। কমিশনার বদল করে নবান্ন। কিন্তু তার পরেও শুক্রবার এবং শনিবারে উত্তাল পরিস্থিতি।
এই এলাকায় ছড়ি ঘোরায় টোটোন বিশ্বাস নামে এক দুষ্কৃতী। সে এবং তার শাগরেদদের ধরতে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। একটি বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল বাহিনী। সূত্রের খবর, সেখানেই দুই তরফে ঝামেলা বাধে। গোলাগুলিও চলে। এদিন সকালে স্থানীয় সমাজবিরোধীদের একটি অংশ স্থানীয়দের প্রতিবাদ কর্মসূচি নেওয়ার নির্দেশ দেয় বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.