ছবি: প্রতীকী
তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: মা ও মেয়ের রহস্যমৃত্যুতে নাম জড়াল তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা জমি মাফিয়ার। শহর শিলিগুড়ির শান্তিনগরের বাড়ি থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা পর মেলে সুইসাইড নোটও। তাতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জমি মাফিয়া প্রসেনজিৎ রায়ের নাম লেখা ছিল। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। অন্যায় করলে দল পাশে থাকবে না বলে সাফ জানিয়েছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। জানিয়েছেন, আইন আইনের পথে চলবে। যদিও সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রসেনজিৎ। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি জড়িত নই।”
‘সুইসাইড নোট’-এ প্রসেঞ্জিত-সহ আরও কয়েকজনের নাম লিখে গিয়েছেন লতা সরকার। সেখানে দাবি করা হয়েছে, জোর করে জমি হাতিয়ে নিতে প্রসেনজিৎ রায় ও তাঁর দলবল বারবার লতাদেবীর স্বামী সাধন সরকারকে চাপ দিচ্ছিল। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন সাধনবাবু। হুমকি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সাধনবাবু। বাড়িতে এসেও খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। সেই চাপ সহ্য না করতে পেরে চরম পথ বেছে নিয়েছেন লতাদেবী।
প্রসেনজিৎ রায়-সহ পাঁচজনের নামে আশিঘর ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাধনবাবু। তদন্ত শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসিপি শুভেন্দ্র কুমার বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।” কেউ কোনও অন্যায় করে থাকলে দল পাশে থাকবে না বলে জানিয়েছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। মেয়র বলেন, “কেউ যদি আইন ভেঙে অন্যায় করে থাকে, তবে দল তাঁর পাশে কখনওই থাকবে না। আইন আইনের পথে চলবে।”
উল্লেখ্য, রবিবার বিকেলে ঘরের মধ্যে থেকে মা লতা সরকার ও মেয়ে তিয়াসা সরকারের দেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। ঘটনার কারণ নিয়ে তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা। খুন নাকি আত্মহত্যা সেই প্রশ্নের উত্তর খুজছিল পুলিশ। রাতেই ঘর থেকে উদ্ধার হয় একটি সুইসাইড নোট। সেখানে লতাদেবীর বয়ানে অভিযোগ আকারে বলা হয়েছে তাঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ওই তৃণমূল নেতা ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ। লতাদেবীর স্বামী সাধনবাবু জানান, “শিলিগুড়ির ভক্তিনগর এলাকাতে এক মহিলার জমি কেনার জন্য কয়েকলক্ষ টাকা অগ্রিম দেন সাধনবাবু। অভিযোগ, তৃণমূল নেতা প্রসেনজিৎ রায় প্রভাব খাটিয়ে অন্য এক ব্যক্তির নামে ওই জমি লিখিয়ে নেন। সাধনবাবুর স্ত্রী লতাদেবী ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে মামলা করতেই শুরু হয় লাগাতার হুমকি। হুমকি দিয়ে বেশ কয়েকলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার সঙ্গীরা।
এর পরও ওই জমির নথি হাতাতে লাগাতার হুমকি আসছিল সাধনবাবুর কাছে। এমনকী, তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগও উঠেছে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। স্বামী মরে গেলে কীভাবে তাঁরা দু’জন বাঁচবেন সেই চিন্তাতে ঘুম উড়েছিল ওই গৃহবধূর। তাই শেষপর্যন্ত এই পথ নিয়েছেন বলেই দাবি করেছেন তাঁর স্বামী। সোমবার মা ও মেয়ের ময়নাতদন্তের পর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় শোকের ছায়া এলাকায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.