নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পাঁচামিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পর থেকেই আনন্দিত এলাকাবাসী। একইসঙ্গে শঙ্কিত। কারণ এলাকাবাসীর কাছে পুরো বিষয়টি অন্ধকারে। তাই কেউ যেন ভুল বুঝিয়ে কয়লা খনি নিয়ে রাজনীতি না করে সে জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে শাসক দলের মধ্যে। তৃণমূলের তরফে আদিবাসী নেতার খোঁজ শুরু হয়েছে। জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুর্নবাসন নিয়ে কথা বলবেন। তারপরেই আমরা প্রচারে নামব। বিরোধীরা অবশ্য এই প্রকল্প নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছে। তাদের দাবি, “এলাকায় একটা পাথর শিল্প চালাতে পারে না রাজ্য। তারা চালাবে কয়লা শিল্প।” যদিও আশার আলো দেখাচ্ছেন আদিবাসী নেতারা। তাঁরা জানান, “আমরা শিল্পের পক্ষে। কিন্তু আমাদের অন্ধকারে রেখে কোনও শিল্প করা যাবে না।”
মহম্মদবাজার ব্লকের দেউচা-পাঁচামির মাটির নিচে কয়লার সন্ধান মিলেছে অনেকদিন। কিন্তু সাত রাজ্যের চাপে তা আর উত্তোলনের চেষ্টা করেনি আগের বামফ্রন্ট সরকার। প্রশাসনিক সভায় এসে সিউড়ির চাঁদমারি মাঠ থেকে কয়লা উত্তোলনে স্বাধীন দায়িত্বের দাবি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনের সমীক্ষায় দেউচা, পাঁচামি, দেওয়ানগঞ্জ ও হরিণসিঙার মাটির তলায় আছে উন্নতমানের কয়লার স্তর। চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় দেউচা থেকে গনপুর পর্যন্ত ওই স্তর বিস্তৃত। উত্তোলনের কাজ শুরু হলে তা আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। প্রাথমিক সমীক্ষায় মাটির নিচে ২০১০ কোটি টন কয়লা উত্তোলন হবে ওই এলাকা থেকে। ৩২টি গ্রামের নিচে থেকে তোলা হবে কয়লার স্তর। যার মধ্যে হিংলো মৌজায় ২২ টি গ্রামের মধ্যে ১৪টি গ্রামকে সরতে হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে আদিবাসী ও সাধারণ জনগোষ্ঠী সমসংখ্যক।
নিশ্চিন্তপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও হরিণসিঙা মৌজা। এছাড়া ভাঁড়কাটা এলাকায় জেঠিয়া, চাঁদা, পাঁচামি, হাটগাছা মৌজার নিচ থেকে কয়লা তুলতে হবে। বীরভূমের খয়রাশোল, কাঁকরতলা এলাকায় কয়লা পাওয়া গেলেও দেউচার নিচে যে কয়লার নমুনা উঠেছে তা অনেক জমাট ও উন্নতমানের বলে ধারণা কয়লা বিশেষজ্ঞদের। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের কাছ থেকে এককভাবে বাংলার তরফে কয়লা উত্তোলনের দাবি আদায় করেন। মুখ্যমন্ত্রী একটি কোম্পানি গঠন করে দিয়েছেন। যার নাম দিয়েছেন বিবিসিএল বা বাংলা বীরভূম কোল লিমিটেড।
শিল্পহীন বীরভূমে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুতের পর এটাই সবচেয়ে বড় শিল্প গড়ে উঠতে চলেছে। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পাওয়ায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচে তৈরি কোল ব্লকের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মহম্মদবাজার ব্লকের তৃণমূল সভাপতি তাপস সিনহা বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে এনে সকলের সঙ্গে দেখা করিয়ে তাঁর হাতেই এলাকার জমি তুলে দেবো। সেজন্য আদিবাসী এলাকায় মানুষদের বোঝাতে আমরা আদিবাসী নেতাদের জনসংযোগে পাঠাতে চাইছি।” আদিবাসী উন্নয়ন গাওতার সম্পাদক রবীন সোরেন বলেন, “আমরা শিল্পের পক্ষে। কিন্তু পুর্নবাসন প্যাকেজ কী হবে, তা জানাতে হবে। কমিটিতে আদিবাসী নেতাদের রাখতে হবে। অন্ধকারে রেখে কয়লা তোলা যাবে না।” বিজেপির মহম্মদবাজার মণ্ডল সভাপতি জগন্নাথ মণ্ডলের কথায়, “আমরা শিল্পের পক্ষে। কিন্তু যেখানে একটা পাথর শিল্পের সমাধান করতে পারছে না রাজ্য। সেখানে এত বড় কয়লা শিল্প কী করে করবে? মুখ্যমন্ত্রী শুরু করুন বিজেপি সরকার এসে তার পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবে।” সিপিএমের এরিয়া সম্পাদক আবদুল মজিদ শিল্পের পক্ষে। কিন্তু কর্মসংস্থান, পুনর্বাসন নিয়ে এখনও ঘোষণা করেনি রাজ্য সরকার। সেগুলি ঘোষণার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ ভেবে দেখা হবে বলেও জানান বাম নেতা।
ছবি: শান্তনু দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.