ছবি: প্রতীকী
ধীমান রায়, কাটোয়া: প্রকাশ্যে জনবহুল বাজারে চলল গুলি। দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু কাটোয়ার বালি ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল কর্মী। বৃহস্পতিবার সকালের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠাচ্ছে। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটাল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের নাম ইয়াসিন শেখ (৪৫)। বাড়ি কেতুগ্রামের রতনপুরের পীড়তলায়। বালির ব্যবসা, ঠিকাদারি করতেন বলে খবর। এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, এদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কেতুগ্রামের আমগরিয়ায় গিয়েছিলেন আত্মীয়র সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে বাজারে বসে খোশগল্প করতে করতে চা খাচ্ছিলেন দুলাল শেখ।
আচমকাই কেউ বা কারা এসে তাঁর মাথা লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। দিনের বেলা জনবহুল এলাকায় শুটআউটের ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয়রা।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠাচ্ছে। পাশাপাশি কে বা কারা এই ঘটনা ঘটাল তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ব্যক্তিগত নাকি ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটল তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। খুনের ঘটনার পরেই এলাকায় আসেন পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন। তিনি বলেন,” এই খুনের ঘটনায় পারিবারিক বিবাদ কাজ করছে বলে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
মৃতের স্ত্রী নুরশোভা বেগম বলেন,” বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ আমার স্বামী বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান। কাশীপুর গ্রামে ব্যবসার কাজে যাচ্ছি বলে বেড়িয়েছিলেন। তারপর রাতে ফের ফোন করে জানান বাড়ি ফিরবেন না। এদিন সকাল দশটা নাগাদ গ্রামের লোকজন আমায় খবর দেন স্বামীকে খুন করা হয়েছে।”
মৃতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েকবছর ধরেই রতনপুরের পাশে নবস্থা গ্রামের এক বিধবা মহিলা জুমাতন বিবির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ইয়াসিন। স্থানীয়দের একাংশের মতে জুমাতনকে বিয়েও করেছিলেন ইয়াসিন। ২০১০ সাল নাগাদ জুমাতন বিবির স্বামী সুকুর শেখ খুন হন। তাদের দুটি ছেলে। পরে ইয়াসিন শেখের সঙ্গে জুমাতনের সম্পর্ক তৈরি হয়। জুমাতন বিবির সঙ্গে মাঝেমধ্যে থাকতেনও ইয়াসিন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায় গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে নবস্থা গ্রামে রসাই খাঁ নামে এক প্রৌঢ়াকে পিটিয়ে খুন করা হয়। ওই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন জুমাতন বিবি। নবস্থা গ্রামে ওদিন আঠারো ছুঁইছুঁই কিশোরীর জন্য নবসমন্ধ এসেছিল। অভিযোগ ওই কিশোরীর বিয়েতে নবসমন্ধের সামনেই আপত্তি তুলেছিলেন জুমাতন বিবি ও তার আত্মীয়রা। জুমাতনের দাবি ছিল তার ছেলের সঙ্গে ওই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তাই তার ছেলের সঙ্গেই বিয়ে দিতে হবে মেয়েটির। মেয়ের পরিবারের লোকজন তা মানতে না চাওয়ায় দুপক্ষের মধ্যে বচসা থেকে সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ তখন কিশোরীর ঠাকুমা রসাই খাঁ(৫৫)কে পিটিয়ে মারা হয়। ওই ঘটনায় নিহত প্রৌঢ়ার ছেলে রতন খাঁ জুমাতন বিবি সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। খুনের অভিযোগে জুমাতন বিবি তার আত্মীয় রেজিনা বিবি-সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানা যায়, ধৃত সাতজনের মধ্যে জুমাতন বিবি-সহ চারজন গত শুক্রবার জামিনে ছাড়া পান। কিন্তু জুমাতন জামিনে মুক্ত হলেও আর নবস্থা ফেরেননি। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার পিলকুণ্ডি গ্রামের দিদির বাড়িতে চলে যান বলে জানা যায়। জানা গিয়েছে, প্রেমিকা জুমাতন বিবি ও বাকি অভিযুক্তদের জামিনের জন্য তদবির করছিলেন ইয়াসিন। জেলেও জুমাতনের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি।
এদিন খুনের ঘটনার পর জুমাতন বিবি দাবি করেছেন, “বুধবার রাতে আমার কাছেই ইয়াসিন ছিলেন। আজ আমাকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে আসছিলেন। আমায় কাপড় কিনে দেওয়ার কথা ছিল। আমগরিয়ার কাছে প্রথমে আন্না গ্রামের বাসিন্দা বাবু শেখ আমার স্বামীকে দাঁড় করায় চা খাওয়ানোর নাম করে। তারপর নবস্থা গ্রামের দুজন ওকে গুলি করে চলে যায়।” যদিও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, খুনের ঘটনার সময় একাই বাইকে ছিলেন ইয়াসিন। জানা যায় রক্তাক্তবস্থায় পড়ে থাকেন ইয়াসিন। তবে স্থানীয়রা আতঙ্কে কেউ তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেননি। পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ ইয়াসিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিন ঘটনাস্থল থেকে দুটি বাইক উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি ইয়াসিনের। অপরটি কার জানার জন্য খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.