সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দরজা ভেঙে পালিয়ে যাওয়া সাত আবাসিকের ঘটনায় পুরুলিয়ার আদ্রার হোম কর্তাকে শো-কজ করল প্রশাসন। সেই সঙ্গে ওই হোমে ডিউটি করা চার হোমগার্ডকেও অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। তাছাড়া ওই হোমের ফি দিনের সকাল সাতটা ও রাত আটটার অ্যাটেনডেন্স রিপোর্টও তলব করেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। গত শনিবার মধ্যরাতে আদ্রার মণিপুর কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্রের আওতায় থাকা অরুণোদয় শিশু নিকেতনের উত্তরণ ভবন থেকে ওই সাত আবাসিক ছাদের দরজা ভেঙে, পাইপ বেয়ে পালিয়ে যায়। যদিও এই ঘটনার দু’দিনের মধ্যে দু’ধাপে ওই সাত আবাসিককে উদ্ধার করে আবার তাদেরকে হোমে ফেরায় পুলিশ।
ঘটনার পরের দিনই দক্ষিণ পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের টামনা থেকে তিনজন। ঠিক তার পরের দিনই ঝাড়খণ্ডের বোকারোর সেক্টর ফোর থেকে আরও চারজনকে সেখানকার পুলিশের সাহায্যে উদ্ধার করে আদ্রা থানা। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবারই ওই হোম কর্তা নবকুমার দাস জেলা প্রশাসনের কাছে তাঁর শো–কজ রিপোর্ট জমা করেন। তবে এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনার জন্য ওই হোম কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা জবাব চেয়েছি। সেই সঙ্গে ওই হোমে থাকা চার হোমগার্ডেরও বদলি হয়েছে। তবে এই বিষয়গুলির থেকে বড় ব্যাপার হল ওই প্রতিষ্ঠানকে শিশু বান্ধব গড়ে তুলতে হবে। যাতে সেখানকার আবাসিকদের ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়। যাতে এই বালক–কিশোররা সেখান থেকে পালানোর কথা ভাবতেই না পারে।”
সেই কারণেই ওই আবাসিকদের পালিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে হোম কর্তাকে শো–কজ করে প্রশাসন। তবে সেই কর্তার উত্তর ছাড়াও জেলা সমাজ কল্যাণ দপ্তর ওই হোমে গিয়ে আচমকা খোঁজ নেবে সেখানে কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা। সমাজ কল্যাণ দপ্তরের এক কর্তার কথায়, “আশ্রয়স্থল থেকে আমাদের কেন পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে সেটা বুঝতে হবে। নিশ্চই সেখানে কোনও ভাল লাগা নেই। নেই কোনও ভালবাসা। নেই মমতার স্পর্শ। সেই কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। আমরা তো বাড়ি থেকে কখনও পালিয়ে যেতে পারি না। যদি এইরকম হয় তাহলে বুঝতে হবে সেখানে কোনও ভাল লাগা নেই। বা সমস্যা হচ্ছে।” তবে ইতিমধ্যেই সমাজ কল্যাণ দপ্তর নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে ওই হোমের পরিবেশ এমনই রয়েছে যেখানে ওই বালক–কিশোররা মানিয়ে নিতে পারেনি। তবে শুধু হোমের পরিকাঠামো নয় ওই আবাসিকদেরকেও কাউন্সেলিং করছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। ফি দিন ওই হোমে গিয়ে আদ্রা থানার পুলিশ তাদের মন বোঝার চেষ্টা করছে। যাতে পালানোর প্রবৃত্তির ভাবনা মন থেকে সরিয়ে মূল স্রোতে ফেরাতে পারে। কারণ এই সাত আবাসিকই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে এই হোমই তাদের ঠিকানা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.