ফাইল ছবি
শংকর রায়, রায়গঞ্জ: ঠিক যেন রূপকথার গল্প। মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল আস্ত হাঁড়ি! আর সেই হাঁড়ি থেকে ঝনঝনিয়ে ঝরে পড়ল রাশি রাশি রুপোর মুদ্রা। প্রায় দেড়শো বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশ আমলের এক টাকার মুদ্রা। একেবারে গোলাকার সেইসব মুদ্রা। আর ঘটনা প্রায় বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়তেই রুপার মুদ্রা সন্ধানে শয়ে শয়ে কৌতূহলি মানুষ ভিড় জমান মজে যাওয়া কাঞ্চন নদীর পাড়ে। সেই এলাকায় মাটি খুঁড়ে মুদ্রা খুঁজতে তুমুল ব্যস্ত হয়ে পড়েন সকলে।
শুক্রবার সকালে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহর থেকে প্রায় বাইশ কিলোমিটার দূরে বিন্দোল পঞ্চায়েতের পালপাড়া এলাকার ঘটনা। মাটির তলা থেকে মুখবন্ধ মাটির হাঁড়ি ভাঙতেই হুড়মুড়িয়ে একের এক এক মুদ্রা ঝরে পড়ে। একসঙ্গে মূল্যবান রুপোর এত মুদ্রা দেখে রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে যায় স্থানীয় গ্রামবাসীদের। ঘটনাস্থলে পুলিশবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকরা ছুটে আসেন। এরপর নদীর পাড় ঘিরে রাখে পুলিশ।
স্থানীয় আগাবহর গ্রাম সংসদের সদস্য তথা বিন্দোল পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের স্বামী মনসুর আলি ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলেন, “আগাবহন এলাকায় কাঞ্চন নদীর সেতুর সংযোগ রাস্তা নির্মাণের জন্য মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ চলছিল। সেই সময় মাটি খুঁড়তে গিয়ে ঘড়া ঘড়া মুদ্রা উঠে আসে। এক একটা মুদ্রা তৎকালীন ইংরেজ আমলের। ১৮৮৭, ১৮৬২ এবং ১৯১৬ সালের রুপোর মুদ্রা মিলেছে বলেই খবর। ১৮৬২ সালে সিসিল বিডন এবং ১৮৪৭ সালের আগাস্থান রিভার্স টমসন রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। তবে প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই মাটির হাঁড়িতে উদ্ধার হওয়া মুদ্রাগুলো স্থানীয় গ্রামবাসীরা যে যার মত হাতে নিয়ে যায়। গ্রামবাসীর তরফে জানা যায়, স্থানীয় লোকজন এক একটা করে মুদ্রা নিয়ে যায়।
ইতিহাসবিদ বৃন্দাবন ঘোষের অভিমত, “আসলে বিন্দোল এলাকার কাঞ্চন নদী দিয়ে ব্রিটিশ আমলে ব্যবসা বাণিজ্য চলত। আর বিন্দোলে অবস্থাসম্পন্ন কুমার ও পাল পরিবারের বসবাস ছিল। আর তখন তো আর ব্যাংকে পরিকাঠামোর প্রচলন বিশেষ ছিল না। তাই মানুষজন পয়সা জমাতেন হাঁড়িতে। আর সেই হাঁড়ি মাটির নিচে লুকিয়ে রাখার রেওয়াজ ছিল। সম্ভবত সেই মুদ্রাই উদ্ধার হয়েছে।” মুদ্রাগুলি বর্তমানের ২ টাকার কয়েনের দ্বিগুণ। প্রত্নসম্পদ হিসাবে ওইসব মহার্ঘ মুদ্রা সংরক্ষিত করে যাদুঘরে রাখা জরুরি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসাবে ইংরেজ আমলের এই বিরল মুদ্রাগুলো ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বাড়তে সাহায্য করবে। এ প্রজন্মের উৎসাহী ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার জন্যও এর মূল্য অসীম। তবে এ ব্যাপারে রায়গঞ্জের বিডিও শুভজিৎ মন্ডল বলেন, “মুদ্রাগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.