রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: দীপাবলির আলোতেই আঁধার নামাল চোখে। কুমারগ্রাম ব্লকের উত্তর নারারথলির সীসাবাড়ি গ্রামে এমনই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোমবার রাতে পারিবারিক পুজো মণ্ডপের তীব্র আলোতে ‘রেটিনা বার্নে’ অসুস্থ শতাধিক বাসিন্দা। তাদের মধ্যে পঞ্চাশের বেশি শিশু রয়েছে। প্রত্যেকের চোখ লাল হয়ে ফুলেছে। সঙ্গে মাথা ব্যথা ও জ্বর। কামাখ্যাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীদের আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “ঘটনাটির তদন্ত চলছে। কী ধরনের লাইট এবং সেটা কোথা থেকে কেনা হয়েছিল খবর নেওয়া হচ্ছে।” আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রসেনজিৎ রায় জানিয়েছেন, বিশেষ ধরণের তীব্র আলো থেকে চোখে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে আলো ছাড়াও বাজির ধোঁয়া ছিল কি না সেটা দেখতে হবে। একটি গ্রাম থেকে চল্লিশজন রোগী হাসপাতালে এসেছে। তাঁদের চোখ লাল হয়ে ফুলেছে, জ্বালা, মাথা ব্যথা, জ্বরের উপসর্গ রয়েছে। তীব্র আলোয় চোখের রেটিনা বার্ন হওয়ার ফলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রত্যেককে চোখে কালো চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, সীসাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় কৃষক নন্দলাল দাসের বাড়িতে কালীপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। সোমবার সন্ধেয় আরতি প্রতিযোগিতা-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। সেখানে শামিল হন গ্রামের মহিলা পুরুষ এবং কচিকাঁচারা। অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়। বারবিশা থেকে তীব্র আলোর একটি বাল্ব কিনে আনেন নন্দলালবাবু। আলো ঝলমলে পরিবেশে শুরু হয় আরতি। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রত্যেকের চোখ জ্বালা শুরু হয়। প্রথমে সবাই মনে করেছিলেন ধূপের ধোয়ায় চোখ জ্বালা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অনেকের মাথা ব্যথা শুরু হয়। আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা বাড়ছিল। সমস্যা টের পেয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে বালব খুলে ফেলা হয়। এরপর রাতভর চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করেন প্রত্যেকে। শিশুদের কষ্ট চরমে ওঠে। তখনও কেউ বুঝতে পারছিলেন না কেমন করে এমনটা হল। কয়েক ঘণ্টা যেতে চোখ লাল হয়ে ফুলে যায়। জল গড়াতে শুরু করে। অনেকের মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়। জ্বর আসে।
রাত অনেক হওয়ায় কেউ ডাক্তারের কাছে যাননি। কিন্তু সকাল হতেই ঝুঁকি নেননি কেউ। প্রথমে রোগীদের নিয়ে বাড়ির লোকজন কামাখ্যাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীদের আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চোখ পরীক্ষা করে দেখেন। মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নারারথলি গ্রামের প্রায় চল্লিশজনের চোখের চিকিৎসা হয়। গ্রামবাসী লাইনে দাঁড়িয়ে। সবার চোখ লাল, ফুলে গিয়েছে মুখ।
ঘটনার পর থেকে পুজোর আয়োজক বাড়ির মালিক নন্দলাল দাস দিশাহারা হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রতি বছর বাড়িতে কালীপুজো হয়। পুজোর পরদিন আরতি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। গ্রামের সবাই শামিল হয়। এদিন এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমার বাড়ির সাতজন অসুস্থ। প্রত্যেককে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খারাপ লাগছে। লাইটের আলোতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে সেটা ভাবনায় ছিল না।” রোগীদের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে প্রত্যেককে কালো চশমা ব্যবহার করতে বলেছে। আই ড্রপ এবং অন্যান্য ওষুধ দিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.