সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: “দিলীপ আর মুকুলের জন্য পুরুলিয়া জিতা সিট চলে গেল, সরি মোদি বাবু কিছু করতে পারলাম না।” সৌজন্যে বিজেপি বাঁচাও কমিটি পুরুলিয়া। মানভুঁইঞা ভাষায় লেখা এই চিঠিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়ার পরেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। বিরোধী দলগুলির হোয়াটসঅ্যাপে যেমন ঘুরছে তেমনই পুরুলিয়ায় বিজেপির একাধিক গ্রুপ-সহ ফেসবুক পেজ ওপেন করলেই এই পোস্টটি ভেসে উঠছে।
পুরুলিয়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকে পছন্দ না হওয়ায় ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’ এই শিরোনামে একটি চিঠি ফেসবুকে পোস্ট করে নানান কথা লিখেছে। আর এর ফলে ফের প্রকাশ্যে এসেছে পুরুলিয়া জেলা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছবি। যদিও ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’-র পিছনে শাসকদল তৃণমূলই রয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপি-র জেলা নেতৃত্বের। কিন্তু, তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, এটা তাদের সংস্কৃতি নয়।
এমনিতেই এই কেন্দ্রে বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটি দেরি করে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করায় দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। তারপর প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর থেকেই দলের ভিতরে জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকে নিয়ে নানান কানাঘুঁষো চলছেই। এমনকী ঝালদা পুরসভা এলাকায় প্রার্থী পছন্দ না হওয়ার কারণে একাধিক বিজেপি নেতা তৃণমূলে যোগদান করেন।
কিন্তু ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’-র ব্যানারে এই পোস্ট যেন সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। দীর্ঘ ওই পোস্টে লেখা, “ডানপন্থী দলে প্রার্থী নির্বাচন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকে প্রার্থী ঘোষণা করায় পুরুলিয়ায় বিজেপি কর্মীদের অবস্থা ক্রীতদাসের মত হয়ে গিয়েছে। সবাই জানে জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো কোনওদিন কারওর বিপদে আপদে কাছে থাকেনি এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। এমপির কোনও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে নেই। সবাই বুঝে গিয়েছে রামায়ণে যেমন রাক্ষসরাজ রাবণ গেরুয়া বস্ত্র পরে মা সীতাকে হরণ করেছিল তেমনই জ্যোতির্ময় হচ্ছেন কলিকালে রাবণের থেকেও অধম ব্যক্তি। পুরুলিয়ায় বিজেপির ক্যান্ডিডেট-র যা অবস্থা তাতে বিজেপি অবশ্যই এখানে হারছে।”
বিজেপি প্রার্থী কেন হারছেন তার ১৩টি কারণও উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। এতে পুরুলিয়া কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো ও বামফ্রন্ট প্রার্থী বীর সিং মাহাতোকে দক্ষ সংগঠক বলা হলেও জ্যোতির্ময় মাহাতোর নামে নানা গালিগালাজ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ‘চিটিংবাজ’ ও ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছে ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বিজেপি প্রার্থীকে যে তাঁর কাজকর্মের জন্য কালি মাখানো হয়েছিল সেই প্রসঙ্গেও টেনে আনা হয়েছে ওই চিঠিতে। একদম শেষের দিকে লেখা আছে, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জনগণ (পুরুলিয়া) বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। অনেক মানুষ মারা গিয়েছে। কেস খেয়েছে, জেল খাটছে আর পার্টির ভুল ক্যান্ডিডেট সিলেকশনের জন্য যদি বিজেপি এমপি ভোটে হেরে যায় তাহলে বিধানসভা ভোটেও খারাপ ফল হবে। তাই তারা নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ করেছে জ্যোতির্ময়ের পরিবর্তে যোগ্য কাউকে প্রার্থী করতে। যাতে পুরুলিয়ায় জেতা যায়। এই চিঠিতে কংগ্রেস ও বাম প্রার্থীকে দক্ষ সংগঠক বললেও উল্লেখযোগ্যভাবে শাসকদলের প্রার্থী সম্বন্ধে একটা কথাও লেখা হয়নি।
এই বিষয়ে বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “যারা দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাঁরা বিজেপি হতে পারেন না। এই ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’ আসলে তৃণমূল। তারাই এই কাজ করাচ্ছে। আমাদের প্রার্থী দু’লক্ষ ভোটে জিতবে।” বিজেপির এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দলের জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেছেন, “এটা ওদের দলের গোষ্ঠীকলহ। তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে উন্নয়নকে সামনে রেখে লড়াই করে। সোশ্যাল সাইটে ওই সব পোস্ট করা তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.