দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: আজ থেকে ৩৩৮ বছর আগেকার কথা। সেই সময় বাংলার মসনদে আসীন নবাব আলিবর্দি খা। তখন শ্রীরামপুর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2022) প্রচলন করেছিলেন তৎকালীন জমিদার হরিনারায়ণ গোস্বামী। আজও ওই পুজোকে কেন্দ্র করে শ্রীরামপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা থাকে তুঙ্গে।
পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা রামগোবিন্দ গোস্বামী। তাঁরই নাতি হরিনারায়ণ গোস্বামীর আমলে শুরু হয় পুজো। বর্তমান প্রজন্মের সদস্য অনিন্দ্য গোস্বামী জানান, তাঁদের পারিবারিক পুঁথি অনুযায়ী নিয়ম মেনে সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে এই পুজো হয়। জানা গিয়েছে, আগে মহালয়ার পর চণ্ডীপাঠ শুরু হয়ে যেত। এখন সেই প্রচলন অবশ্য নেই। রথের দিন কাঠামো পুজোর পর একচালার প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। মায়ের ডাকের সাজ আজও বর্ধমানের পূর্বস্থলী থেকে নিয়ে আসা হয়। এক সময় দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে এই রাজবাড়ির ঠাকুর দালানে অনুষ্ঠিত নাটক ও যাত্রাপালা দেখতে বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসতেন।
তবে অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় এখনও পুরনো আমলের পিতলের ১৩৮টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। আর এই প্রদীপের আলোয় আলোকিত গোটা রাজবাড়ির ঠাকুরদালানের সেই অসাধারণ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে যান ভক্তরা। নবমীতে কুমারী পুজো হয়। দশমীর দিন বাড়ির মহিলারা ঠাকুর দালানের বাইরে মাছ ও পান খেয়ে মাকে বরণ করার পর শুরু হয়ে যায় বিসর্জনের প্রস্তুতি। শ্রীরামপুর রাজবাড়ি ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের পর কাঠামো তুলে নিয়ে এসে শুরু হয় পরের বছরের প্রতীক্ষা।
একসময় এই রাজবাড়িতেই পা রেখেছিলেন জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, মহাত্মা গান্ধী, চিত্তরঞ্জন দাশ, বিধানচন্দ্র রায়, মনমোহন সিং-এর মতো বিশিষ্টজনেরা। এই পরিবারেরই সদস্য তুলসীচন্দ্র গোস্বামী পার্লামেন্টের ডেপুটি লিডার ছিলেন। তিনি অবিভক্ত বাংলায় ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই আজও এই রাজবাড়ির পুজোর আকর্ষণে ছুটে আসেন বহু মানুষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.