সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জেলা পর্যবেক্ষকের সামনেই পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের প্রথম কোর কমিটির বৈঠকে দলের নেতাদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে গেলেন বিধায়করা। রবিবার এই বৈঠক হয় পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের কার্যালয় সীতারাম মাহাতো ভবনে। এই কোর কমিটির আট আমন্ত্রিত সদস্যদের মধ্যে সাতজন সদস্যই ছিলেন গরহাজির। তার মধ্যে চার সদস্য কার্যত প্রকাশ্যেই এই কোর কমিটির সভা ‘বয়কট’ করে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। বৈঠকে উপস্থিত হওয়া নেতারাও দলের তরফে জেলা পর্যবেক্ষক তথা শ্রম ও আইন বিভাগের মন্ত্রী মলয় ঘটককে বুঝিয়ে দেন শুধু বিধায়ক ও জেলা সভাপতি নির্ভর দল তাঁরা আর মানবেন না।
কারণ, যাদের ওপর নির্ভর করে এতদিন দল চলছিল তারা গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে ‘ফেল’ করেছেন। এদিন নতুন করে ব্লক সভাপতি ও কমিটি গঠন নিয়েও দলের নেতাদের সঙ্গে বিধায়কদের ঝামেলা তুঙ্গে ওঠে। পরে এই বিষয়টির সমাধানে দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও সহ–সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাথায় রেখে একটি কমিটি তৈরি করে দেন পর্যবেক্ষক। তবে ওই কমিটিতে বিধায়করাও রয়েছেন। এছাড়া কমিটিতে আছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্যরাও। সবে মিলিয়ে প্রথম কোর কমিটির বৈঠক নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নিতে পর্যবেক্ষক মলয় ঘটকের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
গত ১৬ জুলাই পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের যে কোর কমিটি ঘোষণা করা হয় সেখানে দলের চার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ওই কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছিল। সেইসময় পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক বলেছিলেন, দলের যে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এই কমিটিতে আসেননি তাদেরকে পরবর্তীকালে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু সেই কমিটি গঠনের তিন সপ্তাহের বেশি সময় পরেও তা কার্যকর না হওয়ায় এদিন ওই কমিটির চার আমন্ত্রিত সদস্য এই বৈঠক ‘বয়কট’ করেন। তাঁরা হলেন দলের দুই প্রাক্তন জেলা সহ–সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতো ও জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি ও গৌতম রায়। এছাড়া আরও তিন আমন্ত্রিত সদস্য এই বৈঠকে গরহাজির ছিলেন। তাঁরা হলেন রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়, ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার, দলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দিব্যজ্যোতি প্রসাদ সিং দেও। তবে এই প্রাক্তন জেলা সম্পাদক জেলার বাইরে রয়েছেন বলে তার ঘনিষ্টমহল সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, পুরসভার কাজে কলকাতায় আছেন রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়। অসুস্থতা জন্য বৈঠকে আসতে পারেননি ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার। এই কমিটির আমন্ত্রিত সদস্যদের মধ্যে কেবল উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান শামিম দাদ খান।
যে চার সদস্য এদিন এই বৈঠক ‘বয়কট’ করেন তাদের সকলের অভিযোগ কার্যত বিধায়কদের ওপরেই। দলের প্রাক্তন জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় বলেন, “আমি এই জেলায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। অথচ আমাকেই কোর কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য রাখা হয়েছে। অথচ এতদিন যারা দলের পরিচালনায় প্রথম সারিতে ছিলেন ভোটে তাদের ভরাডুবি হওয়ার পরেও কোর কমিটিতে রয়েছেন। ফলে এমন আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে এই কমিটির বৈঠকের আমন্ত্রণপত্র আমি গ্রহণ করতে পারিনি। চরম অপমানিত হয়েই আমি ওই কোর কমিটির বৈঠক বয়কট করেছি। তবে দলের সঙ্গে থেকে কাজ করে যাব।” একই বক্তব্য দলের প্রাক্তন জেলা সহ–সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের কো–মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “যে বিধায়করা হেরে গেলেন তাঁরাই কোর কমিটিতে ঠাঁই পেলেন। আর আমাদের মত পুরানো কর্মীরাই ওই কমিটিতে আমন্ত্রিত। আমার প্রশ্ন আগের জেলা কমিটি কি বাতিল হয়ে গেল? দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারিনি। তাই ওই বৈঠক বয়কট করেছি।” কোর কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য পদ পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ঘনিষ্ঠ দুই নেতা রথীন্দ্রনাথ মাহাতো ও নবেন্দু মাহালি। তাঁরা বলেন, “আমরা আজ জেলা সভাপতিকে জানিয়ে দিয়েছিলাম এই কোর কমিটির বৈঠকে যাব না। তবে দলের কাজে সবসময় রয়েছি।” এই আমন্ত্রিত সদস্যদের বিষয়টি এদিন পর্যবেক্ষকের নজরে আনেন জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো ও সহ–সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.