অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: কেলেঘাই নদী থেকে মাত্র দুই কিমি দূরে সবং থানার দশগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের হরেকৃষ্ণ বুথ৷ তেমাথানি থেকে পটাশপুর যাওয়ার পথে নতুনপুকুর বাস স্টপেজ৷ সেখান থেকে বাম দিকে একটি মোরামের রাস্তা ঢালু হয়ে নেমে গিয়েছে৷ এই রাস্তাটিই এঁকেবেকে চলে একবোরে চলে গিয়েছে ওই হরেকৃষ্ণ বুথে৷ বুথ এলাকায় ঢোকার মুখ থেকেই রাস্তার দুই পাশে লাল ঝান্ডা উড়ার দৃশ্য যে কারও-র নজরে পড়বে৷ গোটা সবংয়ে যেখানে লাল ঝান্ডা নেই সেখানে এই বুথে এখনও দর্পভরেই উড়ছে লাল ঝান্ডা।
স্থানীয়দের কাছে অবশ্য এই হরেকৃষ্ণ বুথ ‘লেনিনগ্রাদ’ নামে পরিচিত। এই বুথে ভোট দেয় সাড়ে চারশো পরিবার। সেই যুক্তফ্রণ্ট আমল থেকেই হরেকৃষ্ণ বুথের রং লাল। সারা রাজ্যে যেখানে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে লাল শিবির, সেখানে এই বুথ লালের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবং ব্লকের বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতে সবুজ বিপ্লব ঘটে গিয়েছে৷ এমনকী, এই দশগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতেও সবুজ ঝড় হয়েছে৷ একমাত্র এই হরেকৃষ্ণ বুথে লাল বাদে কোনও শিবির কেউ দাঁত ফোটাতে পারেনি৷ এই বুথে জয়ী হন বাম সমর্থিত প্রার্থীই৷ যদিও জয়ী হওয়ার পরে এই বুথের নির্বাচিত গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কৃষ্ণা জানা যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে৷ তাতে অবশ্য এই হরেকৃষ্ণ বুথের ভোটারদের কিছু যায় আসে না। এবারের লোকসভা ভোটেও বাম সমর্থিত সিপিআই প্রার্থী তপন গঙ্গোপাধ্যায়কে জেতানোর শপথ নিয়েছেন তাঁরা।
সবংয়ে হরেকৃষ্ণ বুথের ভোটার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রামপদ সাহু৷ তিনি আবার গত বিধানসভা নির্বাচনে সবংয়ে বামেদের প্রার্থীও হয়েছিলেন৷ হেরে ছিলেন মানস ভুঁইয়ার কাছে। রামপদ সাহু জানালেন, ১৯৬৫-৬৬ সালে গোটা রাজ্যের সাথে এই গ্রামেও জমিদার ও জোতদার বিরোধী কৃষক আন্দোলন হয়েছিল৷ সেই আন্দোলনের জেরে বহু গরীব মানুষ জমির অধিকার ফিরে পেয়েছিলেন৷ ১৯৭৭ সালে রাজ্যে বাম সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে ভূমি সংস্কার, পাট্টা বিলি ও পঞ্চায়েত ব্যবস্হা চালু করার সুফল পান এই বুথের ভোটাররা৷ এই বুথের সেই কৃতজ্ঞতাবোধই ভরসা সিপিএমের। খানিক হলেও চিন্তায় শাসকদল।
ছবি: সৈকত পাঁজা
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.