সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ক্লাসে অনিয়মিত উপস্থিতি, তারপর আধিকারিকদের ঘেরাও করে নম্বর চাইলে চলবে না। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা নিতে হবে, ফলপ্রকাশ করে মার্কশিট বিলি করতে হবে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মসূচিতে এভাবেই পড়ুয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নরমেগরমে সতর্ক করে দিয়ে গেলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
সোমবার চতুর্থ আঞ্চলিক বিজ্ঞান কংগ্রেসের আয়োজন করা হয়েছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগের অডিটোরিয়ামে। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে সংযত আচরণের বার্তা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।এদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। এঁরা দু’জনই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী।
তিনি পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বলেছেন, “কম ক্লাস করে নিমাইবাবুকে (উপাচার্য) ঘেরাও নম্বর চাইলে চলবে না। তাতে ভাল বিজ্ঞানী কেন, ভাল মানুষও হওয়া যাবে না। নিয়ম মেনেই চলতে হবে। সকলকেই নিয়ম মেনে ক্লাস করতে হবে। নিয়ম মেনে যাঁরা চলে, তাঁরাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর যাঁরা তালগোল পাকিয়েছে, তাঁরা বেকার বসে রয়েছে।”
গত কয়েকবছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ নিয়ে বিভ্রাট যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ফল প্রকাশ করতে না পারা, অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশ, মার্কশিটে ভুল থাকা, পরীক্ষা পিছিয়ে-সহ বহু অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এমনকী ঠিকমত খাতা দেখা হয় না বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি বিভিন জেলা থেকে স্নাতকের পড়ুয়া রাজবাটি ক্যাম্পাসে অবস্থান বিক্ষোভ করে। উপাচার্যকে ঘেরাওয়ের ঘটনাও ঘটেছে। আবার ভরতি প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়া এবং পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হয়ে গেলেও আগের সেমিস্টারের ফল প্রকাশিত হয় না, এমন অভিযোগও আছে। সম্প্রতি দু’বার উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহাকে ঘেরাও করে অবস্থা বিক্ষোভ করেন পড়ুয়ারা। এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সেই প্রসঙ্গ টেনে সতর্ক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
পড়ুয়াদের এই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশেও এদিন সতর্কবার্তা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহার নাম উল্লেখ করে পার্থবাবু বলেন, “সময়মত পরীক্ষা নিতে হবে, রেজাল্ট বের করতে হবে। মার্কশিটও সঠিক সময়ে দিতে হবে। কোনও এজেন্সির দোষ বা কিছু কেউ মেনে নেবে না। সময়মত পরীক্ষা নিন আপনারা।” অনুষ্ঠান মঞ্চে আর এক স্বপনবাবু বলেন, “সমাজের নিচুতলায় যাতে বিজ্ঞানের অগ্রগতি পৌঁছয় তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দেখতে হবে। সেই জন্য তাঁদের গ্রামে গ্রামে যেতে হবে। না হলে বিজ্ঞানের উপযোগিতা নিচুতলায় পৌঁছবে না।” কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খামারে কৃষিবিজ্ঞানীদের নিয়ে এসে আলোচনা সভা করা, লিপস্টিক-গাছ বা জৈব রঙ উৎপাদন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। উপাচার্য নিমাইবাবু জানান, বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রকল্পের রিপোর্ট এবার থেকে বাংলা ভাষায় প্রকাশেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ ফল ও তার উপকারিতা পৌঁছতে পারে।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.