সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: ডাক্তার হওয়ার একরাশ স্বপ্ন নিয়ে নিজের জায়গা ছেড়ে বাইরে যাওয়ার পথেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে৷ প্রাণটাই চলে গিয়েছে দুর্গাপুরের রাঁচি কলোনির তরুণী মনীষা ডোমের৷ উত্তরপ্রদেশে ট্রেনে ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ম্যে মৃত্যু হয়েছে তাঁর মা মীনাদেবীরও৷ রবিবার বিকেলে সেই দু’জনের দেহ ফিরল দুর্গাপুরে৷ মা-মেয়ের এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকের আবহ গোটা কলোনিতে৷
রবিবার আজমের শরিফ-শিয়ালদহ এক্সপ্রেসে দুপুর দেড়টা নাগাদ দুর্গাপুরে ফেরে মীনাদেবী, মনীষার দেহ৷ স্টেশনে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও ছিলেন রেল আধিকারিক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব৷ আর্থিক সাহায্যের দাবিতে স্টেশন মাস্টারের ঘরেই প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়৷ রেল আধিকারিক, পরিবারের সদস্যরা মিলে স্টেশন মাস্টারের মাধ্যমে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের ডিআরএমের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান৷
এরপর বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ দু’জনের দেহ পৌঁছায় রাঁচি কলোনিতে৷ ততক্ষণে সেখানে জমায়েত হয়েছেন বহু মানুষ৷ শোকাতুর প্রতিবেশীরা৷ দিল্লি থেকে রাজস্থান যাওয়ার পথে এমন মর্মান্তিক পরিণতির একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী আকাশ মল্লিক নামে এক যুবক, যিনি সম্পর্কে মনীষার দিদির ভাসুরপো৷ দিল্লিতে মনীষা দিদির বাড়ি থেকেই রাজস্থানের কোটায় যাচ্ছিলেন ডাক্তারিতে ভরতি হতে৷ মাঝপথেই এমন দুর্ঘটনা৷ সেই রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে আকাশ বলছেন, ‘ট্রেনের দরজার পাশেই ছিল মা-মেয়ের আসন৷ গভীর রাতে সবাই তখন ঘুমে আচ্ছন্ন৷ আমিও উপরের বার্থে ঘুমোচ্ছিলাম৷ তখনই ছিনতাইবাজরা আমাদের কামরায় উঠে পড়ে৷ লুটপাট শুরু করে৷ মীনা দেবী বাধা দিতে গেলে তাঁকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়৷ তা দেখে মনীষাও ঝাঁপ দেয়৷ তারপরই শব্দে সকলের ঘুম ভেঙে যায়৷ তখন চেন টেনে ট্রেন থামানো হয়৷’ কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ বিপদ যা ঘটার ঘটে গিয়েছে৷ এদিকে, ছিনতাইবাজরাও সতর্ক হয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে৷
রেল সূত্রে খবর, দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে৷ ছিনতাই হওয়া ব্যাগটিরও কোনও খোঁজ মেলেনি৷ রবিবার সন্ধে ৭টা নাগাদ মীনাদেবী, মনীষার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷ স্ত্রী, মেয়ের দেহ দাহ করার পর একেবারে ভেঙে পড়া বাড়ির কর্তা দিলীপ ডোম শুধু একটা কথাই বলে চলেছেন, তাঁর তো সবই শেষ হয়ে গেল৷ দোষীরা যেন যথাযথ শাস্তি পায়৷ তাতেই তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে৷
ছবি : উদয়ন গুহরায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.