রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: শত্রুদেশের ছোঁড়া গোলা থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখতে বীরের মতো শহিদ (Martyr) হয়েছেন ছেলে। এভাবে মৃত্যুর গরিমাই তো আলাদা। হয়ত তাই ঘরে বসেই প্রিয়জনকে হারানোর শোকপ্রকাশ করেননি কেউ। বরং গভীর রাতে নদিয়ার (Nadia) শহিদের শেষকৃত্যে শামিল হলেন গ্রামবাসীরা। রাত যতই হোক, শহিদের বিদায়বেলায় ঘরে রইলেন না কেউ। তেহট্টের শহিদ সুবোধ ঘোষের কফিনবন্দি দেহ নিয়ে শেষযাত্রায় পা মেলালেন সাংসদ, বিধায়ক থেকে আমজনতা – সকলেই। শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর রাতেই হয়েছে শেষকৃত্য।
গত শুক্রবার কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের উসকানিতে ভারতের উপর হামলা চলাকালীন শহিদ হন নদিয়ার তেহট্টের রঘুনাথপুরের তরতাজা যুবক সুবোধ ঘোষ। সেনাবাহিনীতে যোগদানের চার বছরের মধ্যেই বছর চব্বিশের যুবকের এহেন মর্মান্তিক পরিণতি পরিবারের কাছে, প্রিয়জনদের কাছে স্বভাবতই বিনা মেঘের বজ্রপাতের মতো। খবর পেয়ে তাই শনিবার সকাল থেকেই বদলে যেতে থাকে এলাকার স্বাভাবিক ছবিটা। ডিসেম্বরে যে ছেলের বাড়ি ফেরার কথা ছিল, তার কফিনবন্দি দেহের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন সবাই। তিন মাসের কন্যাকে কোলে নিয়ে কান্না চেপে রেখেছিলেন সুবোধের স্ত্রী। কিন্তু রবিবার রাত এগারোটার পর পানাগড় বায়ুসেনা ছাউনি থেকে সাঁজোয়া গাড়িতে দেহ গ্রামে পৌঁছনোর পর আর শোকের বাঁধ মানল না তাঁর। কান্নায় ভেঙে পড়েন শহিদ জওয়ানের মা, স্ত্রী।
রঘুনাথপুরে সুবোধের বাড়ির অদূরে স্কুলমাঠে শেষশ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য তৈরি হয়েছিল অস্থায়ী একটি মঞ্চ। রাতের বেলা সেখানেই প্রতিবেশীরা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। পৌঁছে যান কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারও। তাঁরা পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর মধ্যেও অবশ্য রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়। অভিযোগ, বিজেপি সাংসদ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে যেতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। এ বিষয়ে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার।
এরপর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়, গান স্যালুটে চিরবিদায় জানানো হয় শহিদ বঙ্গসন্তান সুবোধ ঘোষকে। রাতের নিঃস্তব্ধতা তখন ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে পরিজনদের বুকফাটা কান্না। তারই সঙ্গে যেন মিশে রয়েছে প্রতিশোধের আগুন। পাকিস্তানকে যোগ্য শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.